সৌদি আরবের কাছে আমেরিকার আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) থেকে শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, ইয়েমেনে ব্যাপক প্রাণহানি বন্ধ করতে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করতে তিন বছর আগে ওয়াশিংটন ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
সম্প্রতি তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহতের পর, ইরান ও লেবাননের হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠী ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেয়। এরপর থেকেই এ অঞ্চলে সংঘাতের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে নতুন করে সৌদি আরবে আক্রমণাত্মক গোলাবারুদ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা চালানোর মতো কিছু যুদ্ধাস্ত্র সৌদি আরবে বিক্রি-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। প্রচলিত অস্ত্র হস্তান্তর নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে এসব অস্ত্র সৌদির কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহেই সৌদিতে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তটি মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কংগ্রেসের সূত্র অনুযায়ী আগামী সপ্তাহ থেকেই অস্ত্র বিক্রি শুরু হতে পারে। শুক্রবার বিকালেই বিক্রি-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন।
মার্কিন আইনের অনুযায়ী বড় আন্তর্জাতিক অস্ত্র চুক্তিগুলো চূড়ান্ত হওয়ার আগে কংগ্রেসের সদস্যরা সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সুর নরম করেছেন। বিশেষ করে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর সৌদিতে অস্ত্র বিক্রি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তারা।
২০১৪ সালের শেষের দিকে ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে সৌদি-সমর্থিত সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করে হুতিরা। আর ২০১৫ সালে সৌদির নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট ইয়েমেন হামলা শুরু করে। হামলায় মার্কিন অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করত সৌদি জোট। এই যুদ্ধে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হন। ইয়েমেনের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এরপর ক্ষমতায় এসে ২০২১ সালে সৌদিতে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিশেষ করে ইয়েমেনে ইরানপন্থি হুতি বিদ্রোহীদের ওপর সৌদি সামরিক অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানি এবং রিয়াদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ড নিয়ে নাখোশ ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০১৮ সালে 'ওয়াশিংটন পোস্ট'র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামাল খাশোগির হত্যাকান্ড নিয়েও সৌদির বিরুদ্ধে সরব ছিল মার্কিন প্রশাসন।
২০২২ সালের মার্চ থেকে সৌদি ও হুতিরা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যায়। এরপর ইয়েমেনে সৌদি আরব কোনো বিমান হামলা চালায়নি। অন্যদিকে, সৌদিতে হুতি হামলাও উলেস্নখযোগ্যভাবে কমে আসে।