নিহত শতাধিক

গাজায় স্কুলে আবারও ইসরাইলি হামলা

হামলায় নিহত ও আহতদের সবাই শরণার্থী ওটা স্কুল নয়, হামাসের ঘাঁটি দাবি ইসরাইলের

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজা সিটির দারাজ এলাকায় শনিবার সকালে ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আল-তাবিন স্কুল -রয়টার্স অনলাইন
ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার একটি স্কুলে নিহত হয়েছেন শতাধিক ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। শনিবার সকালে এই হামলা চালানো হয়। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ বলেছে, গাজা সিটির দারাজ এলাকায় আল-তাবিন স্কুলে বর্বরোচিত এই হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে স্কুলটিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। যারা নিহত এবং আহত হয়েছেন, তারা সবাই শরণার্থী। হামলার পর ধুলা ও ধ্বংসস্তূপে ঢাকা পড়ে যায় ওই এলাকা। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সড়কে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুরা চিৎকার করছে। অনেকে হতাহতদের সাহায্য করতে দৌড়াচ্ছে। এদিকে, গাজার স্কুলে হামলা চালানো নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে হইচই শুরু হতেই ইসরাইলের দাবি, ওটা স্কুল নয়, হামাসের ঘাঁটি। আর সেই ঘাঁটিতেই হামলা চালানো হয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, 'শনিবার ভোরের দিকে স্কুলটিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি রকেট ছোড়ে ইসরাইলি বাহিনী। যারা নিহত এবং আহত হয়েছেন, তাদের সবাই গত ১০ মাসের যুদ্ধে বাড়িঘর হারিয়ে এই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।' ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এরই মধ্যে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে আইডিএফ বলেছে, ওই স্কুলটিকে নিজেদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল হামাস। এ কারণেই সেখানে অভিযান চালিয়েছে বিমান বাহিনী। এতে আরও বলা হয়, হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সুনির্দিষ্ট অস্ত্র ব্যবহারসহ আকাশ থেকে নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের এমন দাবির সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এর আগে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরাইলের ড্রোন হামলায় অন্তত ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এটি পশ্চিম তীরে কয়েক মাসের মধ্যে অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা বলা হচ্ছে। এদিকে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের নৃশংসতায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এই সংখ্যা কমপক্ষে ৩৯ হাজার ৬৯৯। আহতের সংখ্যা ৯১ হাজার ৭২২। ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সি ইউএনআরডাবিস্নউএ বলেছে- দক্ষিণের খান ইউনিস থেকে ৬০ গাজার থেকে ৭০ হাজার মানুষকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এসব মানুষকে তারা এরই মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ আল-মাওয়াসি এলাকার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুলস্নাহর একজন কমান্ডারকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় ইসরাইলকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম খাতে আরও ৩৫০ কোটি ডলার দেবে ওয়াশিংটন। এর কড়া সমালোচনা করেছেন ইসরাইলি লেখক আকিভা এলডার। তিনি ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজে লেখেন। ফিলিস্তিনি বেসামরিক হতাহতের তুলনায় ইসরাইলি হতাহতের তুলনা করে তিনি বলেছেন, ইসরাইল দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করছে। 'আল-জাজিরা'কে তিনি বলেছেন, যখন ইসরাইলে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করা হয়, তখন সেটাকে স্বাভাবিকভাবে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু যখন ফিলিস্তিনে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করা হয়, তাকে দেখা হয় সামষ্টিক ক্ষতি অথবা দুর্ঘটনাক্রমে নিহত হিসেবে। এরই মধ্যে আল-তাবিন স্কুলে বোমা হামলা করা হয়েছে। এলডার আরও বলেন, ইসরাইলের মূলধারার মিডিয়া দেশটির জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। কিন্তু তারা মাঝেমধ্যেই ফিলিস্তিনি ভিকটিমদের প্রতি অমানবিক আচরণ করে। ওদিকে, বারবার শান্তিচুক্তি করতে গিয়েও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পিছিয়ে আসার সমালোচনা করেছেন হামাসের হাতে এক জিম্মির পিতা হাগাই অ্যাংগ্রেস্ট। তিনি বলেছেন, প্রতিবারই যখন চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়, ততবারই নেতানিয়াহু অপারেশন চালান। এর মধ্য দিয়ে তিনি সরাসরি চুক্তি করাকে ব্যর্থ করে দেন। কাতার ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর হাসান বারারি বলেন, আল-তাবিন স্কুলে হামলায় কমপক্ষে ১০০ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ইসরাইলি সেনারা আবারও গণহত্যা চালাচ্ছে। একে ইসরাইলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং শান্তিচুক্তির প্রেক্ষাপটে দেখা যেতে পারে। তিনি বলেন, শুক্রবার ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, তিনি দোহা বা কায়রো যাচ্ছেন। তার যাওয়া উচিত নয়। চলতি সপ্তাহে মধ্যস্থতাকারী কাতার, মিসর ও আমেরিকা এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাতে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানিয়েছে। এতে ইসরাইল ও নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বারারি বলেন, কিন্তু নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চান না। প্রতিটি সুযোগ এলেই তিনি তাকে উড়িয়ে দেন। প্রতিবারই তিনি আল-তাবিন স্কুলের মতো হামলা চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। হামাস অধিক পরিমাণ ক্ষুব্ধ হয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়। এটা হলো নেতানিয়াহুর গেম।