তীব্র উত্তেজনা

ইরানের হুমকিতে শঙ্কিত ইসরাইল

অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ একটি কেন্দ্রে রক্ত সরবরাহ মজুত করেছে সীমান্তে বিমান প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়েছে ইরান

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকান্ডের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে দেশটিতে হামলার অঙ্গীকার করেছে ইরান ও এর মিত্র গোষ্ঠীগুলো, শঙ্কিত ইসরাইল এখন ওই সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলার জন্য উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছে। ইসরাইলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা সুরক্ষিত ভূগর্ভস্থ একটি কেন্দ্রে রক্ত সরবরাহ মজুদ করেছে, কারখানাগুলো বিপজ্জনক উপাদান সরিয়ে নিয়েছে আর শহরের কর্তৃপক্ষগুলো বোম্ব শেল্টার ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি গত বছরের অক্টোবরে গাজায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুরক্ষিত করতে শুরু করে। আর তারপর থেকে এক্ষেত্রে অনেক প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। কিন্তু গত ১০ দিনে এই প্রস্তুতি জরুরিভিত্তিতে জোরদার করা হয়েছে এবং দেশটির সামরিক বাহিনী উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। গাজায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই উত্তর সীমান্তে লেবাননের ইরান সমর্থিত রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন হিজবুলস্নাহর সঙ্গে সীমিত পর্যায়ের সীমান্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে আছে ইসরাইল, এখন এই সংঘাত সর্বাত্মক আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে। গত বুধবার সেনাবাহিনীতে সদ্য যোগ দেওয়া সেনাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি জানি ইসরাইলের নাগরিকরা সতর্ক অবস্থায় আছেন, আমি আপনাদের আরেকটি বিষয় বলতে চাই, ধৈর্য ধরুন ও ঠান্ডা থাকুন। আমরা প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ, উভয়ের জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের শত্রম্নদের আঘাত হানছি, আর পাশাপাশি নিজেদের রক্ষার জন্যও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।' ইসরাইল এখন তার নিজেকে বহুমুখী যুদ্ধের হুমকির মধ্যে দেখতে পাচ্ছে। দেশটির দীর্ঘদিনের শত্রম্ন ইরানের সমর্থনপুষ্ট হামাস, হিজবুলস্নাহ ও ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাদের। তেহরানে হামাস নেতা হানিয়া ও বৈরুতে হিজবুলস্নাহর সামরিক কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলে হামলার অঙ্গীকার করেছে ইরান ও হিজবুলস্নাহ। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এই হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে মাসের পর মাস সতর্ক থেকে এবং এপ্রিলে ইরানের ছোড়া কয়েকশ' ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ও আন্তর্জাতিক মিত্রগুলোর সহায়তায় ব্যর্থ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরাইল এসব সংকটের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলে সীমান্ত লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকেই হিজবুলস্নাহর রকেট হামলার আওতার মধ্যে থাকা এলাকাগুলো থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে অনেক সীমান্ত এলাকা ভুতুরে ও পরিত্যক্ত হয়ে আছে। কিন্তু হিজবুলস্নাহর রকেটগুলো আরও ভেতরে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলীয় হাইফা বন্দরের মতো স্পর্শকাতর লক্ষ্যস্থলগুলোতে পৌঁছে যেতে পারে। এসব স্থাপনা ভালোভাবেই হিজবুলস্নাহর রকেটের আওতার মধ্যে আছে। হাইফা শহরের রামবাম হাসপাতাল গত অক্টোবর থেকেই উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে, আর তারা আরও তিনটি তলা তৈরি করে জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রেখেছে। জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাও তৈরি করেছে। হাসপাতালটির মুখপাত্র ডেভিডর্ যাটনার বলেছেন, 'কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।' সীমান্তে বিমান প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়িয়েছে ইরান এদিকে, ইরানও বসে নেই। তাদের সামরিক বাহিনী দেশটির পূর্ব সীমান্তে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়িয়েছে। দেশটির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যে কোনো হুমকি মোকাবিলার জন্য সামরিক বাহিনী এই ব্যবস্থা নিয়েছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহত্যা করার পর ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে বুধবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করে বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি রেজা সাবাহিফার্দ। পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য যেসব অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র, রেডার, ড্রোন ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম। ইরানি প্রযুক্তিতে তৈরি করা যেসব অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে, তার প্রশংসা করে কমান্ডার সাবাহিফার্দ বলেন, দেশের বিশেষজ্ঞরা অভ্যন্তরীণভাবে এই সব সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, নানা রকমের হুমকির মুখে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডে এসব অস্ত্র মোতায়েন করা হয়েছে। শত্রম্নদের সামান্যতম তৎপরতাও ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না।