অনেকদিনের পুরনো বন্ধু। কিন্তু দূরত্ব, সময়ের ব্যবধান আর চোখের আড়াল হয়ে চলে গিয়েছিল বিস্মৃতির আড়ালে। কেমন হবে যদি হঠাৎ একদিন ওই বন্ধু হাসিমুখে চলে আসে একেবারে চোখের সামনে? ইন্টারনেট জগতে মার্ক জুকারবার্গের বিস্ময়কর আবিষ্কার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'ফেসবুকে' এই কান্ডটা অহরহই ঘটছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুক যেন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কিংবা যুবা- সবারই এক অবাধ আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। সীমানার গন্ডি ছাড়িয়ে, এই আড্ডার পরিধি এত ব্যাপক যে, পৃথিবীর শেষ প্রান্তের লোকটিকেও করে দিতে পারে আপন, নিত্যদিনের বন্ধু। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে, মজাদার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় শেয়ার অথবা কোনো বিষয়ে মন্তব্য অথবা লাইক দিয়ে নিমিষেই জমে যায় জম্পেশ আড্ডা। ঘরে বসেও সারা পৃথিবীর মানুষের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার এ মাধ্যমটি তার নিজ বৈশিষ্ট্যগুণে পরিণত হয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে। তাই ফেসবুকে গল্প, ছবি আর আড্ডায় এর ব্যবহারকারীরা ডুব দেয় যেন নির্মল এক আনন্দে। সত্যিকার অর্থে আড্ডা কার না ভালো লাগে? কিন্তু এই অনলাইন আড্ডা সম্পর্কে সাম্প্রতিক একটি বিস্ময়কর তথ্য হলো- এটি হতাশা এবং অশান্তিরও কারণ। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা এমনটাই নির্দেশ করছে।
জার্মানির হ্যামবল্ডট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. হানা ক্রাসনোভার নেতৃত্বে সম্প্রতি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। জরিপ শেষে গবেষকরা এর নেতিবাচক কয়েকটি দিক আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়, যেহেতু এটা সবার জন্যই উন্মুক্ত তাই এর ব্যবহারকারী কোনো বন্ধু তার অন্য বন্ধুর সাফল্যে ঈর্শ্বান্বিত হতে পারে। আর এই মানসিক দিকটাই অনেক সময় রূপ নেয় বিদ্রোহে। আর বিদ্রোহ থেকেই হতাশার সূত্রপাত হয়। আবার অনেক সময় তা জীবনের ওপর ঘৃণাও বাড়িয়ে দেয়। এভাবে স্বাভাবিক জীবন হয় অশান্তির সম্মুখীন।
গবেষণাপত্রটিতে আরও বলা হয়, সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করে অনেক সময় অনুভূতিরও পরিবর্তন হয়। ব্যক্তিগত আচরণ এবং ভাব প্রকাশের ভঙ্গিতেও যা নিয়ে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন। জরিপ অনুযায়ী, এক-তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন হয় নেতিবাচক।
গবেষণার মূল বিষয়বস্তু নিয়ে বলতে গিয়ে ড. হানা ক্রাসনোভা বলেন, 'ব্যক্তিভেদে সবারই অনুভূতির পরিবর্তন হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু যখন ফেসবুকে পরিচিত কোনো বন্ধুর বা আগে থেকে পরিচিত বন্ধুর সাফল্যের ঈর্ষণীয় ছবি প্রকাশ করা হয়, তখন নিজের মধ্যে এক ধরনের জ্বালা তৈরি হয়, সেটাই বিদ্রোহের জন্ম দেয়।' তিনি আরও বলেন, 'ঈর্ষা থেকে যে বিদ্রোহের জন্ম হয়, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিজীবনে হতাশা বয়ে আনে।' কোনো ব্যবহারকারী হঠাৎ ফেসবুকে অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার পেছনেও এই হতাশা এবং অসন্তোষ সূক্ষ্ণভাবে কাজ করে। তথ্যসূত্র : ডেইলি মেইল