চলমান উত্তেজনার মধ্যে ফের ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। আর এই হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭১ জন আহত হয়েছেন। এর আগে, অজ্ঞাত ফিলিস্তিনিদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর ৯০টি পচন ধরা মৃতদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। যা তাদের বর্বরতার কথা জানান দেয়। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি বলছে, পরে তাদের গণকবরে দাফন করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু, এএফপি
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান হামলায় আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ হাজার ৬২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। হামলায় এ পর্যন্ত ৯১ হাজার ৪৬৯ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। কারণ, উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ঢুকে গাজার শাসক দল হামাসের প্রাণঘাতী হামলার জবাবে উপত্যকায় প্রায় বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। হামাসের ওই হামলায় নিহত হয়েছে ১২শর মতো ইসরাইলি ও বিদেশি। ওইদিন দুই শতাধিক ইসরাইলিকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসেন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে দখলদার দেশ ইসরাইল। তাদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মসজিদ কিংবা গির্জার মতো বেসামরিক স্থাপনা। হামলার পর বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অভিযান
১২ ফিলিস্তিনি নিহত
ওদিকে, ইসরাইলি বাহিনী মঙ্গলবার পশ্চিম তীরের উত্তরে তিনটি পৃথক অভিযানে ১২ জনকে হত্যা করেছে। রামালস্নার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী স্থানীয় সময় ভোরে অভিযান চালালে জেনিন এলাকায় পাঁচজন ও তুবাস জেলার আকাবা শহরে চারজন নিহত হন। একই সঙ্গে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জেনিনের পশ্চিমে কাফর কুদ গ্রামে আরেকটি অভিযানে তিনজন নিহত ও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আকাবার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনারা ভোর রাতে এসে আমিদ ঘানমের বাড়ি ঘেরাও করে, যার ফলে সেনা ও তরুণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তুবাসের গভর্নর আহমেদ আসাদ বলেছেন, সংঘর্ষে ঘানাম ও অন্য দুইজন নিহত হয়েছেন এবং হাসপাতালের কাছে আরেক কিশোর নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রবেশ করে বাড়িটি ঘিরে ফেলে। স্নাইপাররা কাছাকাছি ছাদে অবস্থান নেয়। সেনারা হাসপাতালের এলাকায় প্রবেশ করে ওই কিশোরকে গুলি করা হয়।
আকাবার মেয়র আবদেল রাজ্জাক আবু আররা বলেছেন, ওই কিশোরকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। এই জায়নবাদী অপরাধ একটি নিয়মতান্ত্রিক অপরাধ, যা ইসরাইলিরা প্রতিদিন করে থাকে।
এদিকে, একই দিন একটি পৃথক ঘটনায় পুলিশ বলেছে, জেরুজালেমের কাছে একটি চেকপয়েন্টে ক্রু ড্রাইভার দিয়ে সীমান্ত পুলিশ সদস্যকে আক্রমণের পর তারা একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে উত্তেজনা বেড়েছে। অঞ্চলটি ইসরাইল ১৯৬৭ সাল থেকে দখল করে আছে। ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা বা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে কমপক্ষে ৬১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে। অন্যদিকে, ইসরাইলের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, একই সময়ের মধ্যে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি হামলায় সেনাসহ কমপক্ষে ১৭ ইসরাইলি নিহত হয়েছে।