পাক-ভারত দ্বন্দ্ব

পরমাণু যুদ্ধ বাধলে মারা যাবে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ

প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যদি পরমাণু যুদ্ধ বাধে, তাহলে এতে অন্তত সাড়ে ১২ কোটি (১২৫ মিলিয়ন) মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। আমেরিকার 'রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়'র পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যালান রোবকের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী 'সায়েন্স অ্যাডভান্সে' প্রকাশিত তার এই গবেষণায় এমন ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হলে ১২৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে; যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছয় বছরে যে প্রাণহানি ঘটেছিল, তার চেয়ে বেশি। অধ্যাপক অ্যালান রোবক বলেছেন, 'এই ধরনের যুদ্ধ হলে শুধুমাত্র টার্গেট এলাকায় বোমা হামলার আশঙ্কা থাকবে না, বরং পুরো বিশ্বই আক্রান্ত হতে পারে।' বিস্ফোরণের কয়েক সপ্তাহ কিংবা মাসের পর বৈশ্বিক জলবায়ুতে বিপর্যয় নেমে আসবে। এর ফলে এই গ্রহে খাদ্য-শস্যের উৎপাদনে ধস নামবে; যা গণঅনাহারের কারণ হবে। কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডল বিষয়ক বিজ্ঞানী ও প্রধান গবেষক ব্রায়ান টুন বলেছেন, এটি এমন এক ধরনের যুদ্ধ হবে; যা মানুষ অতীতে দেখেনি। মার্কিন এই বিজ্ঞানী কয়েক দশক ধরে পারমাণবিক যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করে আসছেন। পরমাণু যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা এই বিজ্ঞানী ১৯৮০ সালে 'পারমাণবিক শীতকাল' নামে একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। রাশিয়া ও আমেরিকার মাঝে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে যা চরম শীত বয়ে আনতে পারে; এই শীতকালীন পরিস্থিতিকে বোঝানোর জন্য 'পারমাণবিক শীতকাল' শব্দটি ব্যবহার করেন ব্রায়ান টুন। কম্পিউটার সিমিউলেশন ব্যবহার করে এই বিজ্ঞানীরা পাক-ভারত পারমাণবিক যুদ্ধের একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এই দুই দেশের জম্মু-কাশ্মীর ইসু্যতে পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। কাশ্মীরি ভূখন্ডকে উভয় দেশই নিজেদের বলে দাবি করে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে। বর্তমানে দুই দেশের হাতে ৩০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও ২০২৫ সালে সেই অস্ত্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি অস্ত্রের বিস্ফোরণে প্রাণ যাবে সাত লাখের বেশি মানুষের। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণের কারণে সৃষ্ট আগুন থেকে তিন কোটি ৬০ লাখ টনের বেশি কালো কার্বন নিঃসরণ হবে, যা বায়ুমন্ডলের ওপরে চলে যাবে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। এর ফলে বিশ্বের অনেক অংশে সূর্যের আলো কোনোভাবেই পৌঁছাবে না। কারণ ওই কালো কার্বনের স্তর ভেদ করে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে পারবে না। শুধু তাই নয়, ভূপৃষ্ঠকে শীতল করবে প্রায় ৯ ডিগ্রি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে ৩০ শতাংশ। যে কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খাদ্য সংকট ও গণঅনাহারের হুমকি তৈরি হবে। আর শীতলতা এমন পর্যায়ে নেমে আসবে; যা গত বরফ যুগের পর আর কখনোই দেখা যায়নি। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পাশাপাশি সায়েন্স জার্নালের উপ-সম্পাদক কিপ হজেস একটি সম্পাদকীয়ও লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধের আড়ালে মাত্র কয়েকটি দেশ একটি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে। এমন ৯টি দেশের হাতে এই মুহূর্তে পারমাণবিক ওয়্যারহেড আছে প্রায় ১৪ হাজার। হজেস বলেছেন, 'এই যুদ্ধের কথা যখন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আসে; তখন দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী এই দুই দেশের সঙ্গে ঝুঁকিতে জড়িয়ে যায় প্রায় পুরো বিশ্বই।' গবেষক অ্যালান রোবক বলেন, যে কোনো ধরনের যৌক্তিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে না। তবে দুর্ঘটনাবশত অথবা হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে, অথবা আতঙ্কিত হয়ে বিশ্বনেতারা এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঠেকানোর একমাত্র উপায় এই অস্ত্র ধ্বংস করে ফেলা। টুন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, 'পাকিস্তান ও ভারত আমাদের এই গবেষণার তথ্য নিয়ে কাজ করবে। কিন্তু অধিকাংশের মতো আমিও উদ্বিগ্ন যে, পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ ফলাফলের ব্যাপারে মার্কিনিরা অবগত নয়।' সংবাদসূত্র : ইউএস টুডে