বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১
ছুরিকাঘাতে শিশু হত্যার জের

যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা

দাঙ্গাকারীদের কার্যকলাপকে 'কট্টর ডানপন্থি গুন্ডামি' বললেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বিভিন্ন শহরে মসজিদগুলো হুমকির মুখে পড়ায় নতুন ব্যবস্থায় বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যুক্তরাজ্যের রডারহ্যামে শরণার্থীদের একটি আবাসিক হোটেলে ব্যাপক হামলা চালায় দাঙ্গাকারীরা। এক পর্যায়ে ওই হোটেলের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবিটি রোববার রডারহ্যাম থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

সাউথপোর্টে ছুরিকাঘাতে শিশু হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। গত রোববার (৪ আগস্ট) কট্টর ডানপন্থিদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষের জেরে অন্তত ১৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

রোববার যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহর ট্যামওয়ার্থ, মিডলসব্রো, বোল্টন, হাল এবং ওয়েইমাউথে বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রডারহ্যামে শরণার্থীদের একটি আবাসিক হোটেলে ব্যাপক হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এর পরপরই জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে চলমান অস্থিরতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রম্নতি দেন প্রধানমন্ত্রী। হোটেলে হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, 'এ দেশের মানুষের নিরাপদ থাকার অধিকার আছে। এরপরও আমরা মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছি, মসজিদে হামলা করছি।' দাঙ্গা-বিক্ষোভকারীদের কার্যকলাপকে 'কট্টর-ডানপন্থি গুন্ডামি' আখ্যা দিয়ে স্টারমার বলেন, অস্থিরতা সৃষ্টিতে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডের সাউথপোর্ট শহরে একটি নাচের কর্মশালায় ছুরি হামলায় তিন শিশু নিহত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৪২০ জন।

সন্দেহভাজন ছুরি হামলাকারী একজন অভিবাসী এবং উগ্র ইসলামপন্থি বলে অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর অভিবাসী-বিরোধী ও মুসলিম-বিরোধী গোষ্ঠীগুলো বিক্ষোভ শুরু করে। যদিও পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন হামলাকারীর জন্ম যুক্তরাজ্যে। তারা ছুরি হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে না। কিন্তু এতেও দমেনি বিক্ষোভ।

গত শনিবার লিভারপুল, ব্রিস্টল এবং ম্যানচেস্টারসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন ভবন, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীরা থাকে- এমন হোটেলগুলোকে হামলার নিশানা করা হয়েছে।

হামলায় বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রয়টার্সের এক সাংবাদিক জানান, মুখোশপরা বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে এবং বেশ কয়েকটি হোটেলের জানালা ভেঙে ফেলে।

ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল জানিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে ১৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও গ্রেপ্তার করা হবে। সোমবার দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার পুলিশপ্রধানদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রদারহ্যামের 'লুণ্ঠনকারী দলগুলোর' কারণে বাসিন্দারা 'চরম আতঙ্কে' রয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর ইংল্যান্ডের রথারহামে সংঘর্ষের সময় ১০ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি হোটেলের জানালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে।

সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ কনস্টেবল লিন্ডসে বাটারফিল্ড বলেন, 'আজ তাদের বিবেকহীন কর্মকান্ড নিছক ধ্বংস এবং জনসাধারণ ও বৃহত্তর সম্প্রদায়কে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি।'

লিভারপুলের নিকটবর্তী সাউথপোর্টে হত্যাকান্ডের শিকার কমিউনিটি নেতারা এবং নিহতদের পরিবার দেশজুড়ে অস্থিরতার সমালোচনা করেছেন। লিভারপুলের একদল ধর্মীয় নেতা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, 'অনেক মানুষ এই মর্মান্তিক ঘটনাকে ধর্মীয় বিভাজন ও ঘৃণা সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।'

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিভিন্ন শহরে মসজিদগুলো হুমকির মুখে পড়ায় নতুন ব্যবস্থায় বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। মধ্য ইংল্যান্ডের ট্যামওয়ার্থের একটি হোটেলের আশপাশের এলাকা এড়িয়ে চলার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। তারা বলেছে, 'একটি বড় দল ওই এলাকায় প্রজেক্টাইল নিক্ষেপ করছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।'

সর্বশেষ ২০১১ সালে যুক্তরাজ্যে দাঙ্গা হয়েছিল, তখন লন্ডনে পুলিশের গুলিতে এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ পাঁচ রাত ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সে সময় দেশটির প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন স্টারমার।

উলেস্নখ্য, গত ২৯ জুলাই সাউথপোর্টে একটি নাচের কর্মশালায় ১৭ বছর বয়সি এক যুবকের ছুরিকাঘাতে তিন শিশু নিহত হয়। যুবককে আটক করা হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, আটক হামলাকারী এক উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী। এরপর থেকেই সাউথপোর্টে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভ ও সহিংসতা অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে