খামেনির সঙ্গে শেষ কথা

একজন নেতা চলে গেলে অন্যজনের উত্থান হয় :ইসমাইল হানিয়া

'হামাস যখনই একজন নেতাকে হারায় আরেকজন নেতা আসেন, কখনো তার কর্মক্ষমতা ও হামাসের নীতি পূরণে আরও শক্তিশালী হয়'

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নিহত ইসমাইল হানিয়া
ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার হওয়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরানে নিহত হওয়ার আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ রুহুলস্নাহ আলি খামেনিকে শেষ কথায় জীবন, মৃতু্য, আমৃতু্য, সহনশীলতা নিয়ে কোরআনের একটি আয়াত বলেছিলেন। বলেছিলেন, 'আলস্নাহই জীবন দান করেন এবং মৃতু্য ঘটান। আর আলস্নাহ সব আমল সম্পর্কে সম্যক অবহিত। যদি একজন নেতা চলে যান, আরেকজনের উত্থান হবে।' এর কয়েক ঘণ্টা পর তেহরানের অতিথি ভবনে হামলায় তিনি নিহত হন হানিয়া। তথ্যসূত্র : রয়টার্স ইসমাইল হানিয়া খামেনির সঙ্গে কথা বলার সময় টেলিভিশনে প্রচারিত এই মন্তব্যটি বিশেষভাবে ধারণ করা হয়। তার এই জীবন দর্শন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের দ্বারা প্রভাবিত। তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদের পক্ষে ছিলেন। ২০০৪ সালে ইয়াসিন ইসরাইলের হাতে নিহত হলেও সামরিক শক্তি হিসেবে হামাস ক্রমেই শক্তিশালী হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে গাজায় 'রয়টার্স'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসমাইল হানিয়া বলেছিলেন, ইয়াসিন তাদের শিখিয়েছেন, ফিলিস্তিনিরা কেবল সংগ্রামের মাধ্যমেই তাদের দখলকৃত মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারে। তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি শেখ ইয়াসিনের কাছ থেকে শিখেছেন ইসলামের প্রতি ভালোবাসা এবং এই ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ এবং অত্যাচারী ও স্বৈরাচারীদের কাছে নতজানু না হওয়া। ফিলিস্তিনি সমর্থকদের কাছে হানিয়া এবং হামাস নেতারা মানেই ইসরাইলি দখলদারিত্ব থেকে মুক্তির পথ। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে হানিয়া একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। গত এপ্রিলে ইসরাইলি বিমান হামলায় তার তিন ছেলে ও চার নাতি-নাতনি এবং অন্তত ৬০ জন আত্মীয় নিহত হয়। হানিয়া বলেছিলেন, 'আমার সন্তানদের রক্তের চেয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের শিশুদের রক্ত আমার কাছে বেশি গুরুত্বের। ফিলিস্তিনের সকল শহীদ আমারই সন্তান।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'শহীদদের রক্ত এবং আহতদের কষ্টের বিনিময়ে আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়েই আমরা আমাদের জনগণের জন্য স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি।' ২০১৭ সালে হামাসের শীর্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া হানিয়া অবরুদ্ধ গাজায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তুরস্ক ও কাতারের রাজধানী দোহা যান। তাকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে বা হামাসের মিত্র ইরানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাস যোদ্ধাদের হামলায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত ও ২৫০ জনকে জিম্মি করার পর হানিয়া আরব দেশগুলোর উদ্দেশে বলেছিলেন, তারা (আরব দেশগুলো) ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাতে এই সংঘাতের অবসান ঘটাবে না। ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া ছিল একটি সামরিক অভিযান, সেই অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজার অভ্যন্তরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে এবং ছিটমহলের বেশিরভাগ অংশে বোমা ফেলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদিব জিয়াদেহ বলেন, হামাস একটি আদর্শ এবং হানিয়াকে হত্যা করে দলটিকে শেষ করা যাবে না। জিয়াদেহ বলেন, 'হামাস যখনই একজন নেতাকে হারায়, আরেকজন নেতা আসেন, কখনো তার কর্মক্ষমতা ও হামাসের নীতি পূরণে আরও শক্তিশালী হয়।' গত মাসে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৭ অক্টোবরের হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মোহাম্মদ দেইফ নিহত হয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছিল ইসরাইল। হামাসের সামরিক শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সালেহ আল-আউরিও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ইসরাইলি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিলেন।