মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা

ইসরাইলে ব্যাপক রকেট হামলা হিজবুলস্নাহর

উত্তর ইসরাইলের বেইত হিলেল শহরে দফায় দফায় হামলা ইসরাইলের নজরদারি সরঞ্জাম ধ্বংসের দাবি হিজবুলস্নাহর নিজ নাগরিকদের লেবানন ছাড়তে বলল বিভিন্ন দেশ

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলে আবারও ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। জ্যেষ্ঠ এক কমান্ডারকে হত্যার ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা ও যুদ্ধের দামামার মধ্যেই শনিবার মধ্যরাতে এই রকেট হামলার ঘটনা ঘটল। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরাইলের হামলায় লেবাননের হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠীর এক সিনিয়র কমান্ডার নিহত হওয়ার পর শক্তিশালী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সঙ্গে ইসরাইলের বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে 'কঠোর' প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে ইরান। গত বুধবার তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃতু্যর জন্যও ইসরাইলকে দায়ী করেছে দেশটি। বৈরুতে ইসরাইল হিজবুলস্নাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টা পর তেহরানে হানিয়াকে হত্যা করা হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, লেবানন-ভিত্তিক ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহও এই অবস্থায় যে কোনো প্রতিশোধের জন্য বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এমন অবস্থায় হিজবুলস্নাহ স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উত্তর ইসরাইলের বেইত হিলেল শহরে কয়েক ডজন রকেট নিক্ষেপ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ফুটেজে দেখা গেছে, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিজবুলস্নাহর নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দিচ্ছে। তবে এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। উত্তর ইসরাইলের বেইত হিলেল বসতিতে কয়েক ডজন 'কাতিউশা' রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে হিজবুলস্নাহ ঘোষণা করেছে। তারা বলেছে, দক্ষিণ লেবাননের কাফার কেলা এবং দেইর সিরিয়ানে ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় বেসামরিক অনেকেই আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার হিজবুলস্নাহ দেইর সিরিয়ানের একজন ১৭ বছর বয়সি কিশোরসহ তাদের দুই যোদ্ধার মৃতু্যর কথা ঘোষণা করেছিল। গত শনিবার (২৭ জুলাই) ইসরাইল-অধিকৃত গোলান মালভূমির মাজদাল শামস গ্রামে একটি ফুটবল মাঠে রকেট হামলায় শিশুসহ ১২ জন নিহত হন। হামলায় আহত হন আরও অন্তত ২৯ জন। লেবাননে ইসরাইলি হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর চার সদস্য নিহত হওয়ার পর এই হামলা চালানো হয়। ভয়াবহ এই হামলার জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহকেই দায়ী করে আসছে ইসরাইল। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে হিজবুলস্নাহ। এরই মধ্যে গত কয়েকদিনে লেবাননে হিজবুলস্নাহর বেশ কিছু টার্গেটে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা বেড়ে গেছে এবং ইসরাইলের সঙ্গে হামাস ও হিজবুলস্নাহর দফায় দফায় সংঘাতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসরাইলের নজরদারি সরঞ্জাম ধ্বংসের দাবি হিজবুলস্নাহর এদিকে, হিজবুলস্নাহ সংগঠন জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলের রামায় নজরদারি সরঞ্জামগুলোতে সরাসরি হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। লেবাননের 'এনএনএ' সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৮টায় ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে লেবাননের মারজায়োন এলাকায় হামলা চালায় ইসরাইল। \হ নিজ নাগরিকদের লেবানন ছাড়তে বলল বিভিন্ন দেশ এদিকে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস তার নাগরিকদের মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে 'যে কোনো টিকিট পাওয়া মাত্র' লেবানন ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির একই ধরনের সতর্কতার পর এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, আঞ্চলিক পরিস্থিতির 'দ্রম্নত অবনতি হতে পারে'। লেবাননের ওপর ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে ফ্রান্সও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবিলম্বে তাদের নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়তে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নিজ দেশের বাসিন্দাদের এই মুহূর্তে লেবাননে সফরের বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে। জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তার নাগরিকদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা জারি করেছে। দেশটি লেবাননে অবস্থানকারীদের অবিলম্বে চলে যেতে বলেছে এবং অন্যদের সেখানে ভ্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কানাডা তার নাগরিকদের ইসরাইল ভ্রমণে না যেতে সতর্ক করেছে। দেশটি বলছে, এই অঞ্চলে 'পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে'।