সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি

ছুরি হামলায় শিশু হত্যার জেরে যুক্তরাজ্যে নতুন করে দাঙ্গা

লিভারপুল, ব্রিস্টল, হাল ও বেলফাস্টে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে

প্রকাশ | ০৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাউথপোর্ট শহরে ছুরি হামলা চালিয়ে তিন শিশুকে হত্যার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। এসব সহিংস বিশৃঙ্খলার ঘটনা পুলিশ আহত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবিটি শনিবার সাউথপোর্ট থেকে তোলা -ফ্রান্স২৪ অনলাইন
ইংল্যান্ডের সাউথপোর্ট শহরে ছুরি হামলা চালিয়ে তিন শিশুকে হত্যার পর থেকে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার এসব সহিংস বিশৃঙ্খলার ঘটনার পুলিশ আহত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি সাউথপোর্টে শিশুদের নাচের ক্লাসে ছুরি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন একজন 'উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী'- অনলাইনে দ্রম্নত এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে শত শত অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারী দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ছুরি হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন ১৭ বছর বয়সি কিশোর অ্যাক্সেল রুডাকুবানার জন্ম ব্রিটেনে। তারপরও অভিবাসনবিরোধী ও মুসলিমবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভ এখন সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে রূপ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশে অবস্থিত চারটি শহর লিভারপুল, ব্রিস্টল, হাল ও বেলফাস্টে সহিংস বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বর্ণবাদবিরোধী গোষ্ঠীর মুখোমুখি হওয়ায় বিশৃঙ্খল মারামারি এবং ইট ও বোতল ছোড়াছুড়ি হয়। পরস্পরবিরোধী কয়েকশ বিক্ষোভকারীকে, যাদের অধিকাংশই তরুণ, সংঘর্ষ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। মার্সিসাইড পুলিশ জানিয়েছে, লিভারপুলে দুই পুলিশ কর্মকর্তার মুখের হাড় ভেঙে গেছে এবং আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে মোটর সাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নগরীর উত্তর-পশ্চিমাংশে এসব ঘটনা ঘটেছে। এখানে প্রায় ৭৫০ জন বিক্ষোভকারী ও সমসংখ্যক বিরোধী বিক্ষোভকারী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। লিভারপুলে অন্তত দুটি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ব্রিস্টলেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। তবে এখানে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীরা অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারীদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিল। টেলিভিশনের ফুটেজে তাদের দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা দেছে। বেলফাস্টে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং অন্তত একটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বেলফাস্টে নিজের ক্যাফের ভাঙা কাচের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রাহমি আকিওল জানান, কয়েক ডজন লোক বোতল ও চেয়ার নিয়ে তার দোকানে হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, 'তারা কেন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তার কোনো কারণ আমার জানা নেই। আমি এখানে ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছি। আমার স্ত্রী, আমরা সন্তানরা এখানকার বাসিন্দা। কী বলব বুঝতে পারছি না, পুরো ঘটনাটাই খুব ভয়ংকর।' যুক্তরাজ্যজুড়ে পুলিশ সহিংস বিশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে চুরি এবং উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে সম্পদের ক্ষতি করার মতো অপরাধের জন্য কয়েক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। গত মঙ্গলবার সাউথপোর্টের একটি মসজিদে হামলার পর শহরগুলোজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং দেশজুড়ে মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে সান্ডারল্যান্ডে শত শত অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভকারী একটি মসজিদের কাছে থাকা দাঙ্গা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে, অনেকগুলো গাড়ি উল্টে দেয় ও অন্তত একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা একটি পুলিশ স্টেশনের কাছেও আগুন ধরিয়ে দেয়।