হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পেছনে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম উঠে এসেছে। আর এই হত্যাকান্ডে ইরানি নিরাপত্তা এজেন্টদের কাজে লাগিয়েছে মোসাদ। এই তথ্য জানিয়ে 'টেলিগ্রাফ' বলছে, আরও দুই মাস আগে হানিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। গত মে মাসে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির জানাজায় যখন হানিয়া অংশ নিয়েছিলেন, তাকে তখনই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু ব্যাপক লোক সমাগমের কারণে ওই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় বলে ইরানের দুই কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত মঙ্গলবার তেহরানে গিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা হানিয়া। যে অতিথি ভবনে তিনি অবস্থান করছিলেন, সেখানে হামলা চালানো হলে গত বুধবার হানিয়া এবং তার একজন দেহরক্ষী নিহত হন। ওই অতিথি ভবনে প্রায় দুই মাস আগে থেকেই বিস্ফোরক পেতে রাখা হয়েছিল বলে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে এসেছে। ওই অতিথি ভবনের কোন কক্ষে হানিয়া থাকছেন, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই দূর থেকে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে জানিয়েছেন ওই ভবনে থাকা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সাতজন কর্মকর্তা। ওই সাত কর্মকর্তার মধ্যে দুইজন ইরানিয়ান ছাড়াও একজন আমেরিকানও রয়েছেন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইসরাইলকে অভিযুক্ত করছে ইরান ও হামাস। তবে ইসরাইল এই হত্যার দায় এখন পর্যন্ত স্বীকার করেনি।
কিন্তু এখন টেলিগ্রাফ বলছে, উত্তর তেহরানের ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পোরেশনের দুই এজেন্ট ওই অতিথি ভবনের তিনটি কক্ষে বিস্ফোরক পেতে রেখেছিল। ভবনের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই এজেন্টরা অত্যন্ত ব্যস্ততার সঙ্গে ওই ভবনের একাধিক কক্ষে ঢুকছে এবং বের হচ্ছে।
হানিয়া হত্যায় ইরানের ইসলামিক 'রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস'র (আইআরজিসি) এজেন্টদের জড়িত থাকার খবরে এই বাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আইআরজিসির এক কর্মকর্তা টেলিগ্রাফকে বলেন, 'আমরা এখন নিশ্চিত যে, এই হত্যাকান্ডের জন্য মোসাদ আনসার আল-মাহদি সুরক্ষা ইউনিট থেকে একজন এজেন্ট নিয়োগ করেছে। তদন্তে জানা গেছে, হানিয়ার বসবাসের কক্ষ ছাড়াও আরও দুই কক্ষে বিস্ফোরণ ছিল। অর্থাৎ, হামলাকারীরা যে কোনো উপায়ে ভবনের বিস্ফোরণ চেয়েছিল।'
আইআরজিসির সামরিক বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা বলেন, এটি ইরানের জন্য মানহানিকর এবং একটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনও বটে। কিন্তু হামলাকারীদের পক্ষে একটি ওয়ার্কিং গ্রম্নপ গঠন করা হয়েছে, যারা হানিয়া হত্যাকান্ডকে 'নিরাপত্তা লঙ্ঘন নয়' বলে প্রচার করছে। তিনি বলেন, কীভাবে এমন একটি হত্যাকান্ড ঘটনো হলো, এটা সবার কাছেই বড় প্রশ্ন। এটা অভ্যন্তরীণ দোষারোপের খেলার ফল। আইআরজিসিকে দখল করে নিয়েছে, বিভিন্ন সেক্টর একে অপরকে ব্যর্থতার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে।
ইরানে আইআরজিসিকে একটি অভিজাত বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আইআরজিসি কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কানি বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করছেন। গ্রেপ্তার করছেন এবং সম্ভবত মৃতু্যদন্ডও কার্যকর করছেন। তিনি গত দুই দিনে বেশ কয়েকবার সব কমান্ডারকে ডেকেছেন। তিনি হানিয়া হত্যাকান্ডের ব্যাখ্যা চান। তার জন্য, নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সমাধান করা এখন প্রতিশোধ নেওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, আইআরজিসি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিকল্প পথ খুঁজছে। তেহরানের মাটিতে হানিয়া হত্যাকান্ড ইরানের অভ্যন্তরে ইসরাইলের প্রভাব বিস্তারকে তুলে ধরে, যা আইআরজিসির জন্য গভীর আশঙ্কা তৈরি করেছে।