গত ৩০ জুলাই। পাহাড়ের ধস নেমে এসেছিল ভারতের কেরালার ওয়েনাড়ের ভেলারিমালায়। সেই ধসে মেপ্পাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মুন্ডাক্কাই এবং চূড়ালমালা গ্রামের পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কেন এই ধস নামল 'দ্য নিউজ মিনিট'কে বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন 'রিসোর্সেস অ্যানালিসিস ডিভিশন অফ দ্য ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সেস' (এনসিইএসএস)-এর সাবেক বিজ্ঞানী কে সোমন। তার মতে, এই ধসের নেপথ্যে রয়েছে ভূতাত্ত্বিক কারণ এবং পাহাড়ি জমি ব্যবহারের ধরন। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ
সোমনের মতে, এই ধসের নেপথ্যে কাজ করেছে পাহাড়ের ঢাল, মাটির ঘনত্ব, মাটি এবং পাথরের প্রকৃতি। আর তার সঙ্গে অবশ্যই ভারী বৃষ্টি। এ ছাড়া মাটির ধরন, পাথরের গঠনও অনেক সময় ধসের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। ধসের আরও একটি কারণ হতে পারে মাটির নিচের অংশ ফাঁপা হয়ে যাওয়া। তবে এ ধরনের ধস সাধারণত পশ্চিমঘাটে দেখা যায় না। তা হলে? সোমনের মতে, ওয়েনাড়ের যে ধস, তার নেপথ্যে রয়েছে পাথরের ফাটল। ভেলারিমালায় যে ধস নেমে এসেছে, সেটি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দুটি উঁচু ভাগের মাঝের অংশ ধসে নিচে নেমে এসেছে। যেটিকে ভূগোলের পরিভাষায় 'স্যাডল' বলে। এই 'স্যাডল' মূলত দু'ভাবে হয়। ফাটল অথবা ক্ষয়কাজের কারণে। ক্ষয়কাজ মূলত চুনাপাথরের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু ভেলারিমালার ক্ষেত্রে পাথরের ফাটলই কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বিজ্ঞানীর মতে, ফাটল দিয়ে পাথরে পানি ঢুকতে ঢুকতে যখন ধারণক্ষমতার চরম সীমায় পৌঁছায়, তখনই পাথরের ফাটল আরও চওড়া হয়ে আলগা হয়ে যায়। আর সেই পাথর হুড়মুড়িয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে। ভেলারিমালায় অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির জেরে পাথরের ফাটলের পানি চরম সীমায় পৌঁছাতেই আলগা হয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসে। তা ছাড়া উচ্চতাও এই ক্ষয়ক্ষতিকে আরও বাড়িয়েছে। ভেলারিমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার ওপরে। সেখানেই ধসের উৎপত্তি। অন্যদিকে, চূড়ালমালা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার মিটার এবং মুন্ডাক্কাই ৯০০ মিটার উঁচুতে। ফলে ভেলারিমালা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে অল্প সময়ের মধ্যে সেই ধস হাজার মিটার নিচে নেমে আসে। ফলে অল্প দূরত্বে এত দ্রম্নতগতির সঙ্গে সেই ধস নেমেছিল যে, সামনে যা পেয়েছে সব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
সোমনের মতে, এর আগেও ১৯৮৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মুন্ডাক্কাই এবং চূড়ালমালায় বেশ কয়েকবার ছোটখাটো ধস নেমেছিল। এই এলাকা ধসপ্রবণ হওয়া সত্ত্বেও বসতি গড়ে তুলতে অনুমতি কেন দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শুধু ভূতাত্ত্বিক কারণই নয়, যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটা, পাহাড় কেটে চাষের কাজ করা, হ্রদ এবং জলাভূমিগুলোকে ভরাট করে দেওয়াও এই ধ্বংসলীলার অন্যতম নেপথ্য কারণ বলেও মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, ওয়েনাড়ের কয়েকটি গ্রামে ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০৮ জনে দাঁড়িয়েছে। সেখানে টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে উদ্ধারকাজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনো বেশ কয়েকজন আটকা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।