গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়ার নিহত হওয়াকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। ইরান ও এর মিত্রদের সম্ভাব্য হামলা থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করতে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান মোতায়েন করবে আমেরিকা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আনাদলু, আল-জাজিরা
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টানগন থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে এ তথ্য। পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সম্প্রতি ইরান এবং তাদের মিত্র-অংশীদারদের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা বৃদ্ধি করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এসব সরঞ্জামের মধ্যে অস্ত্রসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির রসদ রয়েছে।'
পেন্টাগন বলেছে, নতুন মোতায়েন যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষার উন্নতি ঘটাবে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষার জন্য সমর্থন বাড়াবে এবং বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে আমেরিকার সাড়া দিতে প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে।
সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রম্নপ, ইউএসএস থিওডর রুজভেল্ট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রম্নপ নামের দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আগে থেকেই মোতায়েন ছিল। শিগগিরই সেসব ঘাঁটিতে আরও বেশিসংখ্যক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানো হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সাবরিনা।
এদিকে, পৃথক এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়লে মার্কিন সেনাদের মতো নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হবে ইসরাইলেরও। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সেখানে তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও মার্কিন সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নতুন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সেখানকার সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সরঞ্জাম বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
তেহরানে বোমা হামলায় নিহত হন ইসমাইল হানিয়া। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তার এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি এরই মধ্যে এই হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
নেতানিয়াহুকে সতর্ক করলেন বাইডেন
এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও হিজবুলস্নাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরের হত্যাকান্ডের জেরে ইসরাইলে ইরান ও তার মিত্রদের পাল্টা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সতর্ক করতে বাইডেন শুক্রবার জরুরি ফোনালাপ করেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। এ সময় তিনি নেতানিয়াহুকে এই অঞ্চলে আর উত্তেজনা না বাড়তে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। এ সময় বাইডেন জিম্মিদের উদ্ধারে নেতানিয়াহুকে দ্রম্নত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হতে বলেন। ইসরাইলের নিরাপত্তায় মধ্যপ্রাচ্যে আরও মার্কিন যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী পাঠানোরও আশ্বাস দেন বাইডেন।
অন্যদিকে, শীর্ষ কমান্ডার হত্যার জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিজবুলস্নাহ। হানিয়াকে হত্যার জেরে ইসরাইলকে 'কঠোর শাস্তি' দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। তিনি ইতিমধ্যে সরাসরি ইসরাইলে হামলার নির্দেশও দিয়েছেন। 'টাইমস অব ইসরাইল' জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও তাদের মিত্রবাহিনীর সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে ইসরাইল।
গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা 'সর্বোচ্চ সতর্ক' অবস্থায় রয়েছেন। তাদের সামরিক বাহিনী সবদিক থেকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বলে জানান তিনি।
সতর্কাবস্থার ব্যাপারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'যে কোনো পরিস্থিতির জন্য হামলা ও প্রতিরক্ষার দিক দিয়ে ইসরাইল উচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। আমাদের ওপর যে কোনো দিক দিয়ে যে কোনো আগ্রাসনের উচ্চ মূল্য দিতে হবে।'
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলছে, বাইডেন নেতানিয়াহুকে জানিয়েছেন, আমেরিকা 'ইরানের কাছ থেকে আসা সব ধরনের হুমকি' থেকে ইসরাইলকে সুরক্ষা দেবে। এ বিষয়ে আমেরিকা তাদের 'অঙ্গীকার' থেকে বিচু্যত হবে না। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ঠেকাতে প্রয়োজনে ইসরাইলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়েও আলাপ করেছেন দুই নেতা।