স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় বন্দিবিনিময় হয়েছে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে। এর ফলে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ইভান গার্শকোভিচ ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মেরিন পল হুইল মুক্তি পেয়েছেন। ২৪ জন বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) তাদের ছেড়ে দিয়েছে রাশিয়া। শীতল যুদ্ধের অবসানের পর এ ধরনের বৃহত্তম বন্দি বিনিময়ের ঘটনা এটি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই বন্দিবিনিময় চুক্তি হয়েছে। এর আওতায় আমেরিকা ও ইউরোপের জেলে আটক তাদের ১০ বন্দির বিনিময়ে মার্কিন ও জার্মানসহ ১৬ বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ মুক্তি মিলেছে মোট ২৬ বন্দির।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়া, জার্মানি ও অন্য তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে এই বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেছে আমেরিকা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপনীয়তার সঙ্গে এই আলোচনা করা হয়। চুক্তিটির আওতায় মোট ২৪ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ জনকে রাশিয়া থেকে পশ্চিমে পাঠানো হয়েছে। আর পশ্চিমে আটক আট বন্দিকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। জার্মানি নিশ্চিত করেছে, এই চুক্তিতে বার্লিনে নির্বাসিত ভিন্নমতাবলম্বীকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভাদিম ক্রাসিকভের নামও ছিল।
চুক্তিটিকে 'কূটনীতি ও বন্ধুত্বে'র একটি প্রয়াস হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওয়াশিংটনের মিত্রদের এই 'সাহসী সিদ্ধান্তের' জন্য প্রশংসাও করেছেন তিনি। মস্কোয় অবতরণের পর বিমানবন্দরে রাশিয়ায় ফিরে আসা বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আর আমেরিকায় ফিরে যাওয়া বন্দিদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অভ্যর্থনা জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
ইভান গার্শকোভিচের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল রুশ কর্তৃপক্ষের। গত বছর ৩০ মার্চ গার্শকোভিচকে রাশিয়ার ইয়েকাতেরিনবার্গ শহর থেকে আটক করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওদিকে, সাবেক মেরিন সেনা পল হুইলান ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মস্কোর একটি হোটেল থেকে আটক হয়েছিলেন। মস্কোর অভিযোগ, তিনি একটি গোয়েন্দা মিশনে জড়িত ছিলেন।
গত নভেম্বরের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়বেন কমলা হ্যারিস। নির্বাচনি প্রচারণার চূড়ান্ত মাসগুলোয় এসে এ ধরনের একটি চুক্তিকে বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বহু দেশীয় এই চুক্তিটিকে একটি এককালীন বিনিময় হিসেবেই মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, এই চুক্তি আমেরিকা-রাশিয়ার তিক্ত সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ করায় কোনো ভূমিকা রাখবে না।
রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বড় ধরনের বন্দি বিনিময় হতে পারে, এমন জল্পনা চলছিল কয়েকদিন ধরেই। তার মধ্যেই রাশিয়ায় কয়েকজন বন্দিকে তাদের সেল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে এই সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকার জেলে ১২ বছর ধরে বন্দি থাকা কুখ্যাত রুশ অস্ত্র ব্যবসায়ী ভিক্টর বাউটের মুক্তির বিনিময়ে কারান্তরীণ মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ব্রিটনি গ্রাইনারকে মুক্তি দিয়েছিল রাশিয়া।
তারও আগে ২০১০ সালে ভিয়েনায় আমেরিকার জেলে বন্দি ১০ রুশ গুপ্তচরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। বিনিময়ে রাশিয়া মুক্তি দিয়েছিল তাদের জেলে ডাবল এজেন্টের অভিযোগে বন্দি থাকা চারজনকে। ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকেই মস্কো ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে।