শোক ও শ্রদ্ধায় কাতারের লুসাইল রয়্যাল কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার মরদেহ। এর আগে শুক্রবার (২ আগস্ট) দেশটির সবচেয়ে বড় মসজিদ ইমাম মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হানিয়ার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন হামাসের উচ্চপদস্থ নেতারা। যার মধ্যে ছিলেন খালিদ মেশালও। তিনি হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিও জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে হামাসের নেতারা বৃহস্পতিবার দোহা বিমানবন্দরের টার্মাকে হানিয়াকে বহনকারী কফিন গ্রহণ করতে আসেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
দাফনের আগে হানিয়ার কফিন ফিলিস্তিনের পতাকা দিয়ে ঢাকা ছিল। কফিনটি জানাজায় উপস্থিত শত শত মানুষের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। একই হামলায় নিহত হওয়া তার দেহরক্ষীর কফিনও সেখানে রাখা হয়েছিল।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি জানাজার সময় বলেন, 'আমাদের বার্তা হলো, তুমি মাটির গভীরে ডুবছো এবং তোমার শেষ কাছাকাছি চলে এসেছে। হানিয়ার রক্ত সব হিসাব বদলে দেবে।'
গত বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। এর আগের দিন তিনি ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুজ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে যান। অনুষ্ঠান শেষে তেহরানের একটি গেস্ট হাউসে ওঠেন হানিয়া। সেখানেই এক দেহরক্ষীসহ নিহত হন তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার তেহরানে ইসমাইল হানিয়ার প্রথম জানাজা হয়। এতে ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। জানাজা শেষে তার মরদেহ বহনকারী কফিন তেহরানের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। হানিয়ার স্ত্রী আমাল হানিয় বৃহস্পতিবার ইরানে তার স্বামীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'গাজার সব শহীদের জন্য সালাম জানাই, নেতাদের জন্য সালাম জানাই।'
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় জন্মগ্রহণকারী হানিয়া সেখানে বেড়ে উঠলেও বেশ কয়েক বছর ধরে নির্বাসনে কাতারের দোহায় বসবাস করছিলেন। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের চলমান পরোক্ষ আলোচনা তত্ত্বাবধান করছিলেন। তার মৃতু্যতে এই প্রচেষ্টায় কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিবৃতি-বক্তৃতায় অত্যন্ত কঠোর হলেও বিশ্লেষকরা হানিয়াকে হিজবুলস্নাহর মোহাম্মদ দেইফ ও ইয়াহিয়া সিনওয়ারের তুলনায় একজন 'মধ্যপন্থি' ও 'বাস্তবধর্মী' নেতা হিসেবে দেখতেন।
ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে আবারও নতুন করে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরান এরই মধ্যে হুমকি দিয়েছে, তারা হানিয়া হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে সরাসরি ইসরাইলে আঘাত হানবে। এমন আশঙ্কা থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে ইসরাইল। এছাড়া বিশ্বের অনেক বিমান সংস্থা ইসরাইলের তেল আবিবে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।