সরকার ও বিরোধীদের বিতর্ক
প্রকৃতির রুদ্ররোষে ভারতের সাত রাজ্য কেরালায় ভূমিধসে নিশ্চিহ্ন গ্রাম
কেরালায় মৃতু্য বেড়ে প্রায় ৩০০ ভারী বৃষ্টির মধ্যে দিলিস্নতে বিভিন্ন ঘটনায় ৯ মৃতু্য, রেড অ্যালার্ট
প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভারতের কেরালার ওয়েনাড়ে ভয়ংকর ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০০-এর কাছাকাছি। অতিবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দিলিস্ন, মুম্বাইসহ একাধিক শহর। উত্তরাখন্ডের কেদারনাথে 'মেঘভাঙা' বৃষ্টিতে আটকে আছেন বহু পর্যটক। সিমলাতেও শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ। ওয়ানেড়ের ঘটনা বাদ দিলে প্রকৃতির রুদ্ররোষে ভারতের সাত রাজ্যে মৃত অন্তত ৩২। এই পরিস্থিতিতে লোকসভায় বিপর্যয় মোকাবিলা সংশোধনী বিল পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। প্রসঙ্গত, বিগত দিনে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সুদূর দক্ষিণ থেকে উত্তরের কেদারনাথে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে জোর বিতর্ক চলছে। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিয়ান এক্সপ্রেস
ভূমিধসে রাতারাতি নিশ্চিহ্ন পুরো
গ্রাম, প্রাণের অস্তিত্বটুকু নেই!
কেরালার ওয়েনাড় জেলায় ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। রাজ্যের রাজস্ব দপ্তর জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭৬ জনে। গত মঙ্গলবার থেকে উদ্ধার অভিযান চলছে। পুরো শহর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, শত শত মানুষ আটকে পড়েছেন। উদ্ধার অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, এনডিআরএফ ও পুলিশ।
গত মঙ্গলবার কেরালার পাহাড়ঘেঁষা ওয়েনাড় জেলায় ব্যাপক ভূমিধস হয়। চুড়ামালা গ্রামের প্রায় সব বাড়িঘর ও দোকানপাট ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যায়। গ্রামজুড়ে হাহাকার। এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে গাড়ি ও বিভিন্ন বাহন।
কেরালার ওয়েনাড় জেলার মেপ্পাদি পঞ্চায়েতের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে গ্রামটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভোর হতে না হতেই গ্রামের চেহারা একেবারে বদলে যায়। হড়পা বান ও ভূমিধসে ভেসে যায় একটি বাগানের শ্রমিকদের কোয়ার্টার। পাশাপাশি সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বড় অংশও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। স্কুলের অধ্যক্ষ জানান, প্রায় দুই ডজন ছাত্র নিখোঁজ রয়েছে।
গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভূমিধস প্রবণ এলাকা না হওয়ায় এমন বিপর্যয় তারা কখনই আশা করেননি। মালাপ্পুরম জেলার নীলাম্বুর অঞ্চলে কয়েক কিলোমিটার দূরে গ্রামের বেশ কিছু লোক ভেসে গেছেন, অনেক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমিধস ও প্রবল বৃষ্টির কারণে ওই এলাকার প্রবাহগুলোতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ও রাস্তা ধ্বংস হওয়ায় উদ্ধারকাজে বিঘ্ন ঘটছে।
ভারী বৃষ্টির মধ্যে দিলিস্নতে বিভিন্ন
ঘটনায় ৯ মৃতু্য, রেড অ্যালার্ট
এদিকে, ভারতের রাজধানী দিলিস্নতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বুধবার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় বৃষ্টিজনিত বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। ভারতের আবহাওয়া পরিষেবার (আইএমডি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দিলিস্নতে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত ১৪ বছরে দিলিস্নতে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় এই পরিমাণ বৃষ্টি আর হয়নি।
বৃহস্পতিবারও ভারতের রাজধানী অঞ্চলে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া পরিষেবা। সোমবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলতে পারে বলে জানিয়েছে তারা। এ অবস্থায় দিলিস্নজুড়ে 'রেড অ্যালার্ট' জারি করেছে আইএমডি।
নগরীর বাসিন্দাদের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা। বুধবার রাতে দিলিস্ন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ১ আগস্ট রাজধানী অঞ্চলের সব স্কুল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, ভারী বৃষ্টির ফলে দিলিস্নর পাশাপাশি দিলিস্ন-নয়ডা এক্সপ্রেসওয়েতেও ব্যাপক যানজটের কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। রাজধানী অঞ্চলের মেহরৌলি-ছত্তরপুর সড়কে প্রবল বৃষ্টির কারণে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় রাস্তায় আটকে থাকার অভিযোগ করেছেন যাত্রীদের। একইভাবে উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে দিলিস্নর মূলচাঁদ পর্যন্ত ডিএনডি ফ্লাইওভারে গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে।
কয়েকদিন ধরে চলা ভারী বৃষ্টিতে দিলিস্নর বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গত শনিবার নগরীর এক ভবনের বেজমেন্টের একটি কোচিং সেন্টারে পানিতে ডুবে তিন শিক্ষার্থীর মৃতু্য হয়। ওই ঘটনার পর থেকে এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আবহাওয়ার কারণে বিমান চলাচলও বিঘ্নিত হয়েছে, দিলিস্নগামী কমপক্ষে ১০টি বিমানকে জয়পুর ও লখনউয়ের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিমান সংস্থাগুলো আবহাওয়ার কারণে আরও ফ্লাইট বিঘ্নের বিষয়ে সতর্ক করেছে।