মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা

হানিয়ার জানাজায় প্রতিশোধের ডাক

ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধ নিতে মিত্রদের সঙ্গে ইরানের বৈঠক

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার জানাজা বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হামাস প্রধানের জানাজায় ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। এর আগে ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন খামেনি। জানাজার পর তার মরদেহ আজাদি (স্বাধীনতা) চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসমাইল হানিয়ার মরদেহ আজ (শুক্রবার) কাতারের রাজধানী দোহায় দাফনের কথা রয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আরব নিউজ, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, হামাস নেতার জানাজায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। জানাজার আগে হাজার হাজার মানুষ হানিয়ার ছবি নিয়ে মিছিল করেন। তারা ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্রম্নত সামরিক অভিযান চালানোর দাবি জানান। তেহরানের সিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত জানাজায় আসার আগে হাজার হাজার মানুষ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গিয়ে ফিলিস্তিন ও হানিয়ার পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন। তারা ইসরাইলের বর্বরতার প্রতিশোধ নিতে ইরানের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। গত বুধবার (৩১ জুলাই) ইরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। নতুন ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তেহরানে গিয়েছিলেন তিনি। বুধবার এক বিবৃতিতে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ইরানের রাজধানী তেহরানে হানিয়ার বাসস্থানে 'ইহুদিবাদী গুপ্ত হামলার' ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬২ বছর বয়সি হামাস প্রধান ও তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। ইসরাইলে সরাসরি হামলার নির্দেশ খামেনির এদিকে, হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। ইরানি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন ও ইসরাইলের সংবাদমাধ্যম এই প্রতিবেদন গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার জবাব হিসেবে ইসরাইলের ওপর সরাসরি হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো এই তথ্য সামনে এনেছে। ওই তিন কর্মকর্তার মধ্যে দুজন রেভলিউশনারি গার্ড সদস্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হানিয়া হত্যাকান্ডের পর ইরানের 'সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল'র জরুরি বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, হামাস প্রধান হানিয়া নিহত হয়েছেন বলে ইরান ঘোষণা দেওয়ার পরপরই খামেনি বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে এই আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন রেভলিউশনারি গার্ডের দুই সদস্যসহ তিনজন ইরানি কর্মকর্তা। তারা তাদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। কারণ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার জন্য তারা অনুমোদিত কেউ নন। ইরান ও হামাস এই হত্যাকান্ডের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে। টানা প্রায় ১০ মাস ধরে গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে ইসরাইল। ইহুদিবাদী এই ভূখন্ডটি অবশ্য ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার জন্য তেহরানে যাওয়া হানিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেনি। যদিও ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সামরিক কমান্ডারসহ বিদেশে গুপ্তহত্যা করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ইসরাইলের। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর ইসরাইলের বিষয়ক মন্ত্রী আমিচায় ইলিয়াহু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, হানিয়ার মৃতু্য বিশ্বকে আরও নিরাপদ করে তুলবে। এদের জন্য আর কোনো শান্তি/আত্মসমর্পণ চুক্তি নয়, আর কোনো করুণা নেই। গাজায় চলমান এই ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় ইরান অনেকটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছে। দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে এই অঞ্চলে তেহরানের মিত্র এবং প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে তীব্রভাবে আক্রমণ বাড়ানোর মাধ্যমে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে ইরান। ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধ নিতে মিত্রদের সঙ্গে ইরানের বৈঠক হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেনের আঞ্চলিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে ইরান। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট এক ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠক শেষে ইরান এবং প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবেন ইহুদিবাদীদের (ইসরাইল) বিরুদ্ধে কীভাবে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিশোধ নেওয়া যায়।' ইরানের অপর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি এবং বিপস্নবী গার্ডের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই বৈঠকে ছিলেন। গত বুধবার রাতে ইরানের রাজধানী তেহরানে গুপ্ত হত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। এর আগের দিন লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের হামলায় গোষ্ঠীটির সর্বোচ্চ সামরিক কমান্ডার নিহত হন। এই দুটি হত্যাকান্ডের পর ইসরাইল, ইরান ও তাদের প্রক্সি বাহিনীর মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।