লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুলস্নাহ কমান্ডার ফুয়াদ শোকরকে লক্ষ্য করে ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার ওই হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।
তবে হিজবুলস্নাহর দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফুয়াদ শোকর এ হামলা থেকে বেঁচে গেছেন। অবশ্য এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি সংগঠনটি।
হিজবুলস্নাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠের হারেত রেইত এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৫ জন।
এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, বিমান হামলায় হিজবুলস্নাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শোকর নিহত হয়েছেন। একই দাবি করেছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টও।
হামলা থেকে ফুয়াদ শোকর বেঁচে গেছেন বলে দাবি করলেও এর সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দেয়নি হিজবুলস্নাহর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই অঞ্চলের আরেকটি দেশের একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সূত্র তার মৃতু্যর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। হামলায় আহত হওয়ার পর তিনি মারা যান।
এ ছাড়া টুইটারে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর স্ট্রেচারে করে আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে ফুয়াদ শোকরের চেহারার মিল আছে। তবে ভিডিওটি যাচাই করা যায়নি।
ফুয়াদ শোকরের বয়স ৬০ বছরের বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ১৯৮৩ সালে বৈরুতে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন সেনাদের ব্যারাকে বোমা হামলার কেন্দ্রীয় ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় ২৪১ জন মার্কিন সেনা নিহত হন। তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সূত্রগুলো জানায়, মুগনিয়েহ গুপ্তহত্যার শিকার হলে সংগঠনে আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন ফুয়াদ শোকর। আড়ালে থাকতে পছন্দ করা মুগনিয়েহকে হিজবুলস্নাহর সামরিক কর্মকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে স্মরণ করা হয়ে থাকে। তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তালিকায় ছিলেন।
হিজবুলস্নাহর প্রধান হাসান নসরুলস্নাহর বিশেষ সামরিক উপদেষ্টা ও সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ শূরা কাউন্সিলের সদস্য মুহসিন শোকর। তিনি ফুয়াদ শোকর ও আল-হাজ মহসিন নামেও পরিচিত। হিজবুলস্নাহর এই কমান্ডার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অপারেশন সেন্টারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠা হওয়া হিজবুলস্নাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের একজন ফুয়াদ শোকর। তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির কমান্ডার প্রয়াত ইমাদ মুগনিয়েহর বন্ধু। ২০০৮ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি।
হিজবুলস্নাহর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে লেবাননে আগ্রাসনের সময় মুগনিয়েহ ও মুস্তফা বদরেদ্দিনের পাশে থেকে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন ফুয়াদ শোকর। ২০১৬ সালে সিরিয়ায় নিহত হন হিজবুলস্নাহর অভিজ্ঞ কমান্ডার মুস্তফা। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে, ফুয়াদ শোকর হিজবুলস্নাহর সর্বোচ্চ সামরিক ফোরাম জিহাদ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি এই কাউন্সিলের 'স্ট্র্যাটেজিক ইউনিটের' নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন।
ইসরাইলি বাহিনীর দাবি, ফুয়াদ শোকর হিজবুলস্নাহ প্রধানের ডানহাত এবং তিনি তার কৌশলগত বিষয় ও যুদ্ধকালে অভিযান পরিচালনাবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।
গত শনিবার ইসরাইলে দখলে থাকা গোলান মালভূমির দ্রম্নজ অধু্যষিত মাজদাল শাম গ্রামে খেলার মাঠে রকেট হামলায় ১২ জন নিহত হন। এ হামলার জন্য হিজবুলস্নাহকে দায়ী করে ইসরাইল। তবে হামলার বিষয়টি শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে হিজবুলস্নাহ।
ইসরাইল ওই হামলার কড়া জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিলে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে ইসরাইল যাতে সীমিত আকারে হামলা চালায়, সেজন্য জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এখন শীর্ষ কমান্ডারের ওপর হামলার জবাব হিজবুলস্নাহ কীভাবে দেয়, তার ওপর নির্ভর করছে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে।