তুমুল উত্তেজনা

ইসরাইলি যুদ্ধবিমানে হিজবুলস্নাহর হামলা

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হিজবুলস্নাহর ১০ টার্গেটে হামলা হামলা করলেও লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে চায় ইসরাইল

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে কয়েক সপ্তাহ তান্ডব চালানোর পর সেখান থেকে সরে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের হামলার কারণে এক লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচু্যত হয়ে পড়েছিলেন। দখলদার সেনারা সরে যাওয়ার পর খান ইউনিসের বাসিন্দারা তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা -রয়টার্স অনলাইন
লেবাননে হিজবুলস্নাহর ১০টি টার্গেটে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে এক রাতেই হিজবুলস্নাহর প্রায় ১০টি টার্গেটে হামলা চালিয়েছে। এতে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা হিজবুলস্নাহর একটি অস্ত্র সংক্ষণকেন্দ্র, সন্ত্রাসী অবকাঠামো, সামরিক অবকাঠামো এবং একটি রকেট লঞ্চার লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এদিকে, ইসরাইলের একটি যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। তাদের হামলার জেরে যুদ্ধবিমানটি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি বাহিনী এবং লেবাননভিত্তিক হিজবুলস্নাহ সংগঠনের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে ইসরাইল এবং হিজবুলস্নাহ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত শনিবার (২৭ জুলাই) ইসরাইলের দখলকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমিতে একটি রকেট হামলায় শিশুসহ ১২ জন নিহত হন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইলি দখলকৃত এলাকায় এটিই সবচেয়ে প্রাণঘাতী আক্রমণ। গোলান মালভূমির মাজদাল শামস নামের একটি গ্রামে একটি ফুটবল মাঠে চালানো ওই রকেট হামলায় আরও অন্তত ২৯ জন আহত হন। লেবাননে ইসরাইলি হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর চার সদস্য নিহত হওয়ার পর এই হামলা চালানো হয়। সে কারণে এই হামলার জন্য হিজবুলস্নাহকেই দায়ী করে আসছে ইসরাইল। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী। উলেস্নখ্য, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর এতে যোগ দেয় লেবাননের হিজবুলস্নাহও। ১০ মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে হামলা ও পাল্টা হামলা চলছে। তবে গত শুক্রবার ইসরাইলের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১২ শিশুর মৃতু্য হওয়ার পর ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আশঙ্কার মধ্যেই দখলদার ইসরাইলের যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে হিজবুলস্নাহ। ইসরাইলের সঙ্গে যখন তাদের যুদ্ধ শুরু হয়, তখন থেকে প্রায়ই লেবাননের ভেতর ইসরাইলি বিমান গিয়ে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছিল। তবে এখন শোনা যাচ্ছে, ইসরাইলি যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে হিজবুলস্নাহ। এতে বিমানটি পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। গোলান মালভূমিতে ১২ শিশুর মৃতু্যর পর বড় হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে ইসরাইল। এদিকে, হিজবুলস্নাহর এক জ্যেষ্ঠ নেতা সঙ্গলবার জানিয়েছেন, ইসরাইলের হুমকিকে তারা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। যদি ইসরাইলিরা লেবাননে বড় কোনো হামলা চালায় তাহলে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বিদেশিদের পক্ষ থেকে তাদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে ইসরাইল হামলা চালালেও তারা যেন কোনো প্রতিশোধ না নেয়। কিন্তু হামলা হলে তারা অবশ্যই পাল্টা হামলা চালাবেন। যদিও এটির পরিধি কম হতে পারে। তিনি বলেছেন, 'আগ্রাসনের জবাবের পরিধি ও বিস্তৃতি ঠিক করবেন প্রতিরোধ বাহিনীর নেতারা। বিদেশি দূতরা বলছেন, ইসরাইল হামলা চালালে আমরা যেন প্রতিশোধ না নেই, যেন যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু আমরা জবাব দেব।' এই নেতা আরও হুমকি দিয়েছেন, যদি ইসরাইলি সেনারা লেবাননে স্থল হামলা চালায়, তাহলে হিজবুলস্নাহও দখলদার ইসরাইলে স্থল হামলা চালাবে। তিনি বলেছেন, 'আমরা ইসরাইলের কাছ থেকে কোনো স্থল হামলার আশঙ্কা করছি না। কিন্তু তারা যদি স্থল হামলা চালায় তাহলে আমরাও প্রস্তুত। যদি তারা লেবাননে প্রবেশ করে, তাহলে আমরা গ্যালিলিতে (ইসরাইলি সীমান্তবর্তী অঞ্চল) প্রবেশ করব।' লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ 'এড়াতে চায় ইসরাইল' লেবাননের ইরানপন্থি রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর ওপর আঘাত হানতে চায়, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ুক তা চায় না বলে জনিয়েছেন ইসরাইলি দুই কর্মকর্তা। সোমবার ইসরাইলের আরও দুই কর্মকর্তা জানান, কয়েকদিন ধরে লড়াই চলতে পারে এমন প্রস্তুতি নিয়ে হিজবুলস্নাহর ওপর আঘাত হানতে যাচ্ছে ইসরাইল। যে চারজন ইসরাইলি কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারা সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন। আর পাল্টা হামলা চালাতে ইসরাইলের পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে আর কোনো তথ্য দেননি। এদের মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আছেন। দেশটির এক কূটনীতিক বলেছেন, 'হিসাব এমন, প্রতিক্রিয়া যেন সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা না ঘটায়। এই মুহূর্তে এটি আমাদের পক্ষে যাবে না।'