গোলানে হামলার জের

এবার লেবানন-ইসরাইল যুদ্ধের আশঙ্কা

হিজবুলস্নাহকে চরম মূল্য দিতে হবে যা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি হুমকি নেতানিয়াহুর হিজবুলস্নাহর একাধিক টার্গেটে হামলা ইসরাইলকে 'নজিরবিহীন পরিণতির' হুঁশিয়ারি দিল ইরান

প্রকাশ | ২৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইল অধিকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমির একটি ফুটবল মাঠে শনিবার রকেট হামলায় শিশুসহ ১২ জন নিহত হন। রোববার নিহতদের কফিন গোলানের দ্রম্নজ গ্রামে আনা হলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন -রয়টার্স অনলাইন
এবার লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে এই যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। গত শনিবার ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির একটি ফুটবল মাঠে রকেট হামলায় শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়। হামলায় আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৩ জন। এই হামলার জন্য লেবাননের হিজবুলস্নাহকে দায়ী করেছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। এর জন্য ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে তেল আবিব। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যা ঘটেছে তার জন্য হিজবুলস্নাহকে 'চরম মূল্য দিতে হবে, যা এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি।' যদিও হিজবুলস্নাহ রকেট হামলার কথা অস্বীকার করেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজায় হামলা শুরু করে। এর পরের দিন, অর্থাৎ ৮ অক্টোবর লেবাননের হিজবুলস্নাহ ইসরাইলের সীমান্ত এলাকায় হামলা শুরু করে। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে হামলা চালাচ্ছে। অবশ্য ইসরাইল এবং হিজবুলস্নাহ উভয়ই ইঙ্গিত দিয়েছিল, তারা সর্বাত্মক সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছে। কারণ এটি বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। হিজবুলস্নাহর একাধিক টার্গেটে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল গোলান মালভূমিতে হামলার জবাব হিসেবে লেবাননে হিজবুলস্নাহর একাধিক টার্গেটে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। স্থানীয় সময় রোববার সকালে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা লেবানন ভূখন্ডের গভীরে হিজবুলস্নাহর সাতটি টার্গেটে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কী পরিমাণ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এর আগে গোলান মালভূমিতে হামলার বিষয়ে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, 'নিহতদের মধ্যে একাধিক শিশু রয়েছে। আর এই হামলা হিজবুলস্নাহই চালিয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্যে কোনো ভুল নেই। আমরা কোনোভাবেই চুপ থাকব না ও হিজবুলস্নাহকে এর কঠোর জবাব দেব।' তবে ইসরাইল এই দায় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অস্বীকার করেছে হিজবুলস্নাহ। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, 'মাজদাল শামসে করা হামলায় শত্রম্নপক্ষের কিছু সংবাদমাধ্যম আমাদের অভিযুক্ত করছে। আমরা পরিষ্কারভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র শাখা ইসলামিক রেজিস্ট্যান্সের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তবে হিজবুলস্নাহর বিভিন্ন টার্গেটে ইসরাইলের পাল্টা হামলার ঘটনায় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।' এর আগে ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে হামলার ঘটনায় হিজবুলস্নাহকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'নেতানিয়াহু স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতাকে বলেছেন, ইসরাইল এই হত্যাকান্ডের জবাব না দিয়ে যাবে না এবং হিজবুলস্নাহকে এজন্য কঠিন মূল্য দিতে হবে এবং এটা হবে নজিরবিহীন।' তার এমন হুঁশিয়ারির কয়েক ঘণ্টা পরেই হিজবুলস্নাহর বিভিন্ন টার্গেটে হামলার ঘটনা ঘটল। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা 'সন্ত্রাসী' টার্গেটগুলোতে হামলা চালিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরাইল হয়তো লেবাননের এমন জায়গায় আঘাত হানবে, যেখানে এখন পর্যন্ত হামলা চালানো হয়নি। অবশ্য লেবাননও অপেক্ষা করছে ইসরাইল কী করে তা দেখার জন্য। উলেস্নখ্য, গোলান মালভূমির চারটি গ্রামের মধ্যে মাজদাল শামস একটি, যেখানে প্রায় ২৫ হাজার দ্রম্নজ জনগণ বাস করে। ১৯৮১ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমি অধিভুক্ত করার সময় তাদের ইসরাইলি নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন তারা তা ফিরিয়ে দেয়, ফলে তারা ইসরাইলে পড়াশোনা ও কাজ করতে পারলেও ভোট দিতে পারে না। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে ওই এলাকাটির দখল নেয় ইসরাইল, যদিও তা জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়নি। ইসরাইলকে 'নজিরবিহীন পরিণতির' হুঁশিয়ারি দিল ইরান এদিকে, লেবাননে সম্ভাব্য দুঃসাহসিক অভিযান সম্পর্কে ইসরাইলকে সতর্ক করেছে ইরান। ইসরাইল লেবাননে হিজবুলস্নাহর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পর এমন হুঁশিয়ারি দিল তেহরান। রোববার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, তেহরান সতর্ক করছে যে, এই ধরনের কর্মকান্ডের 'নজিরবিহীন পরিণতি' হতে পারে। তিনি বলেন, লেবাননে ইসরাইলের যে কোনো নতুন অজ্ঞতাপূর্ণ পদক্ষেপ এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং যুদ্ধের সুযোগকে প্রসারিত করতে পারে। কানানির দাবি, এই ধরনের বোকামি আচরণের নজিরবিহীন পরিণতি এবং প্রতিক্রিয়াগুলোর জন্য ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে হবে।