বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

খান ইউনিসে বাস্তুচু্যত প্রায় দুই লাখ

গাজায় অস্থায়ী হাসপাতালে ফের হামলায় নিহত অন্তত ৩০
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
খান ইউনিসে বাস্তুচু্যত প্রায় দুই লাখ

ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর গত চার দিনে সেখানে বাস্তুচু্যত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজারের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনওসিএইচএ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের জেরে গাজায় বাস্তুচু্যতির নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি

খান ইউনিসে অভিযানের জন্য গত সোমবার সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ও এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। নির্দেশে বলা হয়, যদি শহরের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলের লোকজন নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এলাকা না ছাড়েন তাহলে সেই অবস্থাতেই অভিযান শুরু করবে ইসরাইলি সেনারা।

যুদ্ধ শুরুর পর গত ৯ মাসের বেশি সময় ধরে পুরো গাজাতেই সাধারণ মানুষকে বারবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যেতে হয়েছে। আল-জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি বলেছেন, খান ইউনিসের বিভিন্ন সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অনেকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সঙ্গে কিছুই আনতে পারেননি। গাজায় এখন প্রচন্ড গরম। তারা তাপে পুড়ছেন, সুপেয় পানি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে ডায়রিয়া, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এরই মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে।

গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর। গাজায় মানবিক কর্মকান্ডের ওপর বিশেষ এক অধিবেশনে এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আমরা সম্মিলিতভাবেই ব্যর্থ হয়েছি। নিরাপত্তা পরিষদও ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বারবার ত্রাণ পাঠানোর কথা বলছি, কোন পথে সেসব পাঠানো নিরাপদ- তা নিয়ে আলোচনা করছি। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হচ্ছে ইসরাইলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই কেবল অর্জিত হচ্ছে।'

গাজায় অস্থায়ী হাসপাতালে ফের

হামলায় নিহত অন্তত ৩০

এদিকে, গাজার দেইর আল-বালাহর একটি অস্থায়ী হাসপাতালে দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জনের মৃতু্য হয়েছে। সেখানকার 'খাদিজা' নামের একটি স্কুলে হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছিল। শনিবার এই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, হাসপাতালটি লক্ষ্য করে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন।

মিডিয়া অফিস বিবৃতিতে বলেছে, 'কয়েক ডজন রোগী এবং আহত মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া অস্থায়ী হাসপাতালে দখলদার ইসরাইলের ভয়াবহ গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাস্তুচু্যত বেসামরিক মানুষের ওপর চালানো এই গণহত্যার পুরোপুরি দায় দখলদার ইসরাইল এবং মার্কিন প্রশাসনের।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, খাদিজা স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরে হামাসের একটি কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা চালানো হয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্কুলটি ব্যবহার করে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসরাইলি সেনারা সেখানে হামলা চালানোর আগে বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করেছে বলেও দাবি করা হয়।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী হামাসের যোদ্ধাদের নির্মূল করার লক্ষ্য নিয়ে অবিরাম হামলা চালিয়ে গেলেও তা যে সহজ হচ্ছে না তা বিভিন্ন লক্ষণে স্পষ্ট হচ্ছে। হামাসের যোদ্ধারা অব্যাহতভাবে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যোদ্ধাদের ছোট ছোট ইউনিটগুলো অনবরত মর্টারের গোলা নিক্ষেপ করে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর আঘাত হানছে। শুক্রবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এ ইউনিটগুলোকে দমন করতে তাদের সেনারা খান ইউনিসে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করছে এবং টানেল ও অন্য অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। ইসরাইলের দাবি, গাজা যুদ্ধের শুরুতে হামাস ও তাদের মিত্র ইসলামিক জিহাদের ২৫ হাজারের বেশি যোদ্ধা ছিল, এদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার এরই মধ্যে নিহত অথবা বন্দি হিসেবে আটক হয়েছে। তবে ইসরাইলের এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

গত কয়েকদিন ধরে গাজায় আবারও হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। এতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের মৃতু্য হচ্ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিভিন্ন অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর ওইদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালানো শুরু করে ইসরাইল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে