রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
ভোগান্তি উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের

পাত্র সংকটে দক্ষিণ কোরিয়া ভরসা ম্যারেজ মিডিয়া

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
পাত্র সংকটে দক্ষিণ কোরিয়া ভরসা ম্যারেজ মিডিয়া

'পাত্র' সংকট দেখা দিয়েছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায়। এই সংকটে পড়ে এখন বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চশিক্ষিত মেয়েদের। তাদের জন্য উপযুক্ত পাত্রের বড়ই অভাব পড়ে গেছে দেশটিতে। ফলে 'মনের মতো' পাত্রের সন্ধান পেতে পরিবারগুলো এখন 'ম্যারেজ মিডিয়া'র দ্বারস্থ হচ্ছে।

ধরা যাক- কনের বয়স ২৭। আর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স ডিগ্রি। বাংলাদেশে এমন কনের বরের অভাব হবে? উত্তরে আপনি হয়তো বলবেন, না হবে না। কিন্তু এই কনেটির বাড়ি যদি হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়, তাহলে চিত্রটা হবে একেবারেই ভিন্ন।

দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা; বিশেষ করে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, তাদের জন্য পছন্দসই পাত্র পাওয়াটা একটা বিরাট ঝক্কি বলে দেখা যাচ্ছে। পাত্র খুঁজে না পাওয়ার পেছনে দুটো কারণের কথাই এখন বেশি শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো, উচ্চশিক্ষিত মেয়েরা আজকাল নিজেদের পছন্দকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। অর্থাৎ আগে যেমন বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রকেই মেয়েরা বিয়ে করতে রাজি হতো, এখন আর সেটি হচ্ছে না। পাত্র খুঁজে না পাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েরা এখন অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে বিয়ে করতে চায়, যা গত ২০ বছর আগেও ছিল না।

একদিকে উচ্চশিক্ষা, অন্যদিকে নিজেদের পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। তার ওপর আছে একটু বেশি বয়সে বিয়ে করার প্রবণতা। ফলে পছন্দসই পাত্র খুঁজে পাওয়া রীতিমতো একটা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাত্র খোঁজার এই ঝামেলা থেকে বাঁচতেই পরিবারগুলো তাই ম্যারেজ মিডিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছে।

যেমন আন। মাঝ বয়সি একজন নারী। তিনি বললেন, তার নিজের মেয়ের বয়স এখন ২৯। কিন্তু এখনো তার পাত্র পাওয়া যায়নি। আবার বয়স ৩০ পার হয়ে গেলে পাত্র পাওয়াটা আরও কঠিন হবে। তাই আগামী এক বছরের মধ্যে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছেন আন। তিনি ম্যারেজ মিডিয়ায় গেছেন, তাদের সদস্য হয়েছেন। এখন অপেক্ষার পালা। এই এক বছরের মধ্যে পছন্দসই একটি পাত্র যেন মিলে যায় এটাই তার প্রার্থনা।

এদিকে, পাত্র খুঁজে দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানুষের ভিড় প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এই সুযোগে ব্যবসাও জমেছে বেশ। পাত্র-পাত্রী খুঁজে দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো তাই এখন দুই হাতে টাকা কামাচ্ছে। বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিয়ের জুটি মিলিয়ে দেওয়ার এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারের বাণিজ্য চলছে প্রতিবছর।

জুড়ি মিলিয়ে দেওয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত দেওয়া হয় পাত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা এবং পারিবারিক অবস্থার বৃত্তান্ত। এসব বিষয় দেখে এক পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন আরেক পরিবারের মেয়ে। তবে বিয়ের জন্য জুড়ি মেলানোর এই পদ্ধতিটাকে সমালোচনা করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই। তারা বলছেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু বৈষয়িক দিকের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানে সামাজিক মর্যাদা আর পারিবারিক প্রতিপত্তির বিষয়টাই প্রধান হয়ে উঠছে। ফলে মানুষের মানবীয় দিকগুলো দেখার সুযোগ থাকছে না।

রাজধানী সিউলের ইয়নসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞানের অধ্যাপক কিম হিউন মে বলেন, 'সামাজিক অনিশ্চয়তা, দুশ্চিন্তা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ইত্যাদি নাগরিক মানুষের মধ্যে বাড়ছে। ফলে বিয়ের সময় জুটি খোঁজার ওপরও প্রভাব পড়ছে এই মানসিকতার। এটাও সামাজিক পরিবর্তনেরই একটা ছবি।' তথ্যসূত্র : ডিডাবিস্নউ নিউজ, রয়টার্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে