মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
জাতিসংঘের প্রতিবেদন

কংক্রিট-ইস্পাতের ধ্বংসস্তূপ গাজায় সরাতে লাগবে ১৫ বছর

এখনই যদি হামলা বন্ধ হয়, তবে সরাতে প্রায় ১৫ বছর লাগবে
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
কংক্রিট-ইস্পাতের ধ্বংসস্তূপ গাজায় সরাতে লাগবে ১৫ বছর

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। টানা ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৯ হাজার ফিলিস্তিনি। বিরামহীন এই আগ্রাসনে গাজা ভূখন্ড পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, গাজায় যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তাতে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে সময় লাগতে পারে ১৫ বছর। এমনটিই জানিয়েছে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডাবিস্নউএ। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স

ইউএনআরডাবিস্নউএ জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনার বোমা-গোলা-ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চার কোটি টন কংক্রিট আর ইস্পাতের ধ্বংসস্তূপ জমেছে গাজায়। এখনই যদি হামলা বন্ধ হয়, তবে তা সরাতে প্রায় ১৫ বছর সময় লেগে যাবে।

গাজার বিভিন্ন প্রান্তে জমা হওয়া ওই ধ্বংসাবশেষ সময় বিশেষে সাধারণ ফিলিস্তিনের পক্ষে 'প্রাণঘাতী' হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তা ছাড়া বহু মৃতদেহ ওই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকায় সেগুলো পচে সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামোর এসব ধ্বংসাবশেষ ও ধ্বংসস্তূপ গাজা উপত্যকার মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, কারণ এতে অবিস্ফোরিত বহু বোমা এবং ক্ষতিকারক বিভিন্ন পদার্থ থাকতে পারে।

সংস্থাটি বলেছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের জন্য ১০০টির বেশি ট্রাকের প্রয়োজন হবে। নিরাপদভাবে ওই ধ্বংসাবশেষ সরাতে অন্তত ৫০ কোটি ডলার প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলি হামলার পর প্রায় ২৪ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সরাতে হয়েছিল। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) মনে করছে, এবার গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ '২০০৮ সাল থেকে গাজায় অন্যান্য সংঘাতের জেরে উৎপন্ন সব ধ্বংসাবশেষের সম্মিলিত যোগফলের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি'। ইউএনইপি আরও বলেছে, গাজার কিছু ধ্বংসাবশেষ 'অ্যাসবেস্টস' দ্বারা দূষিত। বিষাক্ত এই খনিজ ক্যান্সারসহ ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করে।

টানা ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলের আগ্রাসনের জেরে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটসহ গাজা ভূখন্ডের বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গত মাসে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলের 'আর্মি রেডিও' বলেছিল, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি যুদ্ধবিমান গাজায় প্রায় ৫০ হাজার বোমা ফেলেছে এবং এর মধ্যে দুই হাজার থেকে তিন হাজার বোমা বিস্ফোরিত হয়নি। এছাড়া গত মে মাসে ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) জানিয়েছিল, গাজার বাড়িঘর পুনর্র্নির্মাণে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইউএনডিপির আরব রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক বু্যরোর পরিচালক আবদুলস্নাহ আল-দারদারি সে সময় বলেছিলেন, 'আমাদের অনুমান অনুযায়ী, গাজার সামগ্রিক পুনর্গঠনের জন্য কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। আল-দারদারি আরও বলেন, 'আমরা ১৯৪৫ সাল থেকে এ রকম কিছু দেখিনি।'

সামগ্রিকভাবে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এতটাই প্রকট যে, গাজায় মানব উন্নয়ন সূচক ৪০ বছর পিছিয়ে গেছে বলে ইউএনডিপি ধারণা করছে। আল-দারদারি বলেছেন, 'গাজায় গত ৪০ বছর ধরে মানব উন্নয়নে হওয়া সব বিনিয়োগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৮০-এর দশকে ফিরে গেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে