ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। গাজার বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিরা এই স্কুলটিকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আবু ওরাইবান স্কুল থেকে হামাসের 'সন্ত্রাসীরা' তৎপরতা চালাচ্ছিল, তাদের লক্ষ্য করে রোববার হামলাটি চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেখানে কোনো সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল না আর হতাহতদের মধ্যে শিশুরাও আছে। এই নিয়ে আট দিনের মধ্যে পঞ্চমবারের মতো কোনো গাজার স্কুলে বা স্কুলের কাছে হামলা চালাল ইসরাইল।
ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা (ইউএনআরডাবিস্নউএ) পরিচালিত আবু ওরাইবান স্কুলে রোববার বিকালে যখন হামলা চালানো হয়, তখন সেখানে কয়েক হাজার শরণার্থী ছিল। হামাস শাসিত গাজার দমকল বাহিনী রোববার সন্ধ্যায় জানিয়েছিল, ইসরাইলি হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আর তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ওই হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এটি বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে 'গণহত্যার আরও বিস্তৃতি'- এমন মন্তব্য করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এই হামলার নিন্দা করেছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী স্বীকার করেছে, তারা ৬ জুলাই থেকে গাজার বেশ কয়েকটি স্কুলে বা স্কুলের কাছে পাঁচটি হামলা চালিয়েছ। এসব স্কুল হামাসের রাজনীতিক, পুলিশ ও যোদ্ধারা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল বলে দাবি করেছে তারা। আর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলে ফের বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করে ইসরাইলি বাহিনী। এতে মাঘাজি শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে পাঁচজন নিহত হন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারগুলো সোমবার দিনভর গাজায় 'সন্ত্রাসীদের' ডজনের বেশি লক্ষ্যস্থলে আঘাত হেনেছে।
এদিকে, খান ইউনিসের কাছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বোমা হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের পূর্বে আবাসান শহরে একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। হামলায় চারজন নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি হামলায় আরও ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ হাজার ৬৬৪ জনে পৌঁছেছে বলে সোমবার অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিরামহীন এই হামলায় আরও অন্তত ৮৯ হাজার ৯৭ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর করা তিনটি 'গণহত্যায়' ৮০ জন নিহত এবং আরও ২১৬ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
টার্গেট করে হামাস নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা ইসরাইলের
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতাদের টার্গেট করে হত্যার পরিকল্পনা করেছে ইসরাইল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন হামাসের শীর্ষ নেতাদের ওপর বিমান হামলা চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার একটি আরব সংবাদমাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের তৃতীয় ধাপে প্রবেশ করেছে ইসরাইল।
লন্ডনভিত্তিক 'আশরাক আল-আওসাত' নামের এই আরব সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, হামাসের উচ্চপদস্থ নেতাদের পাশাপাশি যারা ৭ অক্টোবরের হামলা, রকেট ছোড়ার কাজ করেছেন, তাদেরও হত্যা করার চেষ্টা চালাবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। এমনকি যারা হামাস, আল-কাসাম ব্রিগেডস, ইসলামিক জিহাদ এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর সদস্যদের বেতন দেওয়ার কাজটি করছে, তাদের ওপরও হামলা চালাবে ইসরাইলি বাহিনী।
এ ছাড়া কয়েকদিন আগে গাজা সিটির সাধারণ মানুষকে ইসরাইলিরা সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল মূলত 'হামাসের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষুব্ধ' করে তুলতে। ইসরাইলিদের ধারণা এভাবে বারবার সরে যাওয়ার নির্দেশনা দিলে গাজার সাধারণ মানুষ হামাসের ওপর বিরক্ত হবে। তাদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, হামাসের কারণে তারা এমন দুর্ভোগে পড়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, আদতে ফল হয়েছে উল্টো।