আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার শিকার হওয়ার পর প্রথম মুখ খুলেছেন। বলেছেন, শনিবারের হামলায় তিনি মারাও যেতে পারতেন। সেদিন পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে এক নির্বাচনী প্রচারণায় তার ওপর হামলা চালানো হয়। তার কানে গুলি লেগে তিনি আহত হলেও অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। তবে বুলেট একটু এদিক-সেদিক হলেই বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেত, এমনকি তিনি হয়তো মারাও যেতে পারতেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি
ওই হামলার ঘটনার পর প্রথমবারের মতো মার্কিন গণমাধ্যম 'নিউইয়র্ক পোস্ট'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, 'আমার মনে হচ্ছিল, ভাগ্য বা ঈশ্বরই আসলে আমাকে বাঁচিয়েছেন।' বুলেটের আঘাতে সহজেই তার মৃতু্য হতে পারত উলেস্নখ করে ট্রাম্প জানান, তিনি মাথা ঠিক সময়ে ঘুরানোর কারণে বুলেট তার কান ছিদ্র করে চলে গেছে। নইলে তখনই তার মৃতু্য হতে পারত। তিনি বলেন, 'আমার এখন এখানে থাকার কথা ছিল না। আমার হয়তো মৃতু্য হতে পারত।'
ট্রাম্প ওই সময়কার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে তাকে গুলি করা হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে দেখেছিলেন। তিনি বলেন, 'ওই মুহূর্তে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর কাছ থেকেই আমি শক্তি পেয়েছিলাম। এটা বর্ণনা করা কঠিন। তবে আমি জানতাম যে, বিশ্ব এই ঘটনা দেখছে। আমি জানতাম, ইতিহাস এই ঘটনা বিচার করবে এবং আমি জানতাম যে, তাদের আমার এটা জানাতে হবে যে, আমরা ঠিক আছি।'
উইসকনসিনের শহর মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিমানে ডান কানে ব্যান্ডেজ বাঁধা ৭৮ বছরের ট্রাম্প হামলার শিকার হওয়ার মুহূর্তটিকে স্মরণ করে বলেন, 'এটি একটি পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা।' তিনি জানান, চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, তার ফিরে আসা 'একটি অলৌকিক ঘটনা'। নিউইয়র্ক পোস্টকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'যখন গুলির ঘটনা ঘটে, তখন আমি বক্তব্যের অন্য একটি পার্টের লিখিত অংশ দেখার জন্য পোডিয়ামের দিকে ঝুঁকেছিলাম। মূলত এই কারণেই আমি বেঁচে গেছি বলে আমার ধারণা।' সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তাকে রক্ষা ও বন্দুকধারী থমাস ক্রুকসকে হত্যার জন্য সিক্রেট সার্ভিসের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, 'নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা দুর্দান্ত কাজ করেছেন।'
সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাইরাল হওয়া একটি ছবি নিয়েও কথা বলেন। তার সেই ছবিতে দেখা যায়, রক্তাক্ত মুখমন্ডল নিয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মুষ্টি উঁচিয়ে ধরেছেন এবং বলছেন, 'ফাইট, ফাইট, ফাইট'। সেই ছবি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, 'অনেক লোকেই বলছেন, এই ছবিটি তাদের জীবনে দেখা সেরা আইকনিক ছবি। তারা ঠিক বলেছেন। তবে এই ধরনের ছবি পাওয়ার জন্য প্রাণও দেওয়া লাগতে পারে, কিন্তু আমি মরিনি।' ট্রাম্প আরও বলেন, 'অনেক লোক বলছেন, ভাগ্য বা ঈশ্বরের সহায়তায় আজ আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরেছি।'
ভয়াবহ ওই হামলা থেকে বেঁচে ফেরার একদিন পর রিপাবলিকান পার্টির ন্যাশনাল কনভেশনে যোগ দিতে উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াকিতে পৌঁছেছেন এই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই সম্মেলনের পরিকল্পনা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। হামলায় আহত হওয়ার পরেও ট্রাম্প এই সম্মেলন পেছাতে চাননি। তাই পূর্বনির্ধারিত সময়েই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানান, তিনি এই সম্মেলন দুদিন পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আবার সিদ্ধান্ত নেন যে, একজন হামলাকারী বা আততায়ীর জন্য পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা তিনি পরিবর্তন করবেন না।
স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়ার বাটলারে এক নির্বাচনী প্রচারণার সময় হামলার শিকার হন ট্রাম্প। তার ওপর ওই হামলার কারণে সোমবার আয়োজিত সম্মেলনের সুরক্ষার বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হচ্ছে।