জার্মানিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হলে ইউরোপীয় রাজধানীগুলোকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। শনিবার এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। সাম্প্রতিক ন্যাটো সম্মেলনের সময় জার্মানিতে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রসহ দূরপালস্নার অস্ত্র স্থাপন করার কথা বলেছিল হোয়াইট হাউস। এরই প্রতিক্রিয়ায় এমন সতর্কবার্তা দিল রাশিয়া। তথ্যসূত্র : এএফপি
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল 'রোশিয়া ওয়ান'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে পেসকভ একটি 'প্যারাডক্স'-এর কথা বলেছেন, যেখানে 'ইউরোপ আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু আর আমাদের দেশ ইউরোপে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হবে।' তিনি বলেন, 'এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধারণ করার যথেষ্ট ক্ষমতা আমাদের আছে। তবে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই দেশগুলোর রাজধানী।'
পেসকভ ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, এই ধরনের সংঘর্ষ পুরো ইউরোপকে দুর্বল করে দিতে পারে। যেমনটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে শেষ হয়েছিল শীতল যুদ্ধ। তিনি বলেন, 'ইউরোপ ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ তার সেরা সময়টাতে নেই। অন্যভাবে বলতে গেলে, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অনিবার্য।'
গত বুধবার ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সময় হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সাল থেকে তারা জার্মানিতে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ পর্যায়ক্রমে দূরপালস্নার অস্ত্র মোতায়েন করবে। হোয়াইট হাউস জানায়, 'এই ধরনের উন্নত ক্ষমতার প্রয়োগ ন্যাটোর প্রতি আমেরিকার প্রতিশ্রম্নতি এবং ইউরোপের সম্মিলিত প্রতিরোধে এর অবদানকে প্রদর্শন করবে।'
এরই মধ্যে এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে ক্রেমলিন। ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তারা একটি নতুন শীতল যুদ্ধের দিকে হাঁটার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে সরাসরি অংশ নেওয়ার অভিযোগ করেছে। গত শুক্রবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। এ সময় উত্তেজনার 'সম্ভাব্য বৃদ্ধির' ঝুঁকি কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন তারা।
সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের সমালোচনা সত্ত্বেও মার্কিন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০ বছরের বিরতির পর জার্মানিতে আবারও মার্কিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো হবে। মার্কিন এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে সাংবাদিকদের শলৎস বলেছিলেন, এটি 'সম্মিলিত প্রতিরোধের একটি ঝলক মাত্র। এটি শান্তি রক্ষা করছে এবং সঠিক সময়ে একটি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।'
ব্রডকাস্টার ডয়েচল্যান্ডফাঙ্ককে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্তটি দেশটির সক্ষমতার একটি 'গুরুতর ফাঁক'টিকে প্রকাশ করেছে।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ইউরোপীয় রাজধানীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে ক্রেমলিনের এমন সতর্কতার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, আমেরিকা ও ন্যাটো 'রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সংঘাত চায় না, তবে ন্যাটো মিত্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত যে কোনো সামরিক পদক্ষেপ একটি অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে।'
রাশিয়াকে 'মিত্রদের নিরাপত্তা এবং ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সরাসরি হুমকি' বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন মুখপাত্র। তিনি বলেছেন, 'রাশিয়াই এই যুদ্ধ শুরু করেছিল এবং আজ রাশিয়াই পারে এটি শেষ করতে।'
জার্মান সেনাবাহিনীতে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করে এমন দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র নেই। দেশটিতে শুধু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলো বিমান থেকে ছোড়া যায়। ৮০'র দশকে শীতল যুদ্ধের চূড়ান্ত সময়ে পশ্চিম জার্মানিতে মার্কিন পার্শিং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মোতায়েনের ফলে ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়। তখন কয়েক হাজার শান্তিবাদী প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। ৯০'র দশকে জার্মানি পুনরায় একত্রিত হলে দেশটিতে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন অব্যাহত থাকে। তবে শীতল যুদ্ধের অবসানের পর মস্কোর হুমকি কমে গেলে ইউরোপে মোতায়েন করা ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস করে আমেরিকা।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর, আমেরিকার নেতৃত্বে এখন ইউরোপে প্রতিরক্ষা জোরদার করছে ন্যাটো দেশগুলো।