প্রতিবন্ধীর ওপরও নৃশংসতা

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রতিবন্ধী যুবক মুহাম্মদ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শেজাইয়াতে ইসরাইলি সেনাদের কুকুরের হামলায় এক প্রতিবন্ধী যুবকের মর্মান্তিক মৃতু্য হয়েছে। প্রতিবন্ধী এই যুবক কথা বলা থেকে শুরু করে কিছুই করতে পারত না। ২৪ বছর বয়সি ওই যুবকের নাম মুহাম্মদ। সে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকত। যুবকটি 'ডাউন সিনড্রোমে' আক্রান্ত ছিল। তথ্যসূত্র : মিডল ইস্ট আই মুহাম্মদের মা নাবিলা আহমেদ বলেছেন, গত ২৭ জুন থেকে শেজাইয়াতে দখলদার ইসরাইলের সেনারা ব্যাপক হামলা চালায়। ওইদিন থেকে নিজেদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন তারা। কিন্তু একদিন তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় ইসরাইলি সেনারা। এসেই প্রথমে একটি কুকুরকে বাড়ির ভেতর ছেড়ে দেয়। ওই কুকুরটি এসে অবুঝ মুহাম্মদকে কামড়ে ধরে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও মুহাম্মদকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। এর বদলে বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে তাকে আলাদা একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় সেই রুম থেকে প্রচন্ড চিৎকার করছিল মুহাম্মদ। চিৎকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারেননি তার মা। ইসরাইলিরা শেজাইয়া থেকে চলে যাওয়ার পর গত বুধবার মুহাম্মদের পরিবার দ্রম্নত তাদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, বাড়িতে পড়ে আছে তার গলিত মরদেহ। এ ছাড়া তারা দেখেন, মুহাম্মদের মুখমন্ডল খাচ্ছিল পোকামাকড়। মুহাম্মদের মা নাবিলা আহমেদ বলেছেন, 'তার চিৎকার এবং কুকুর থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টার যে চিত্র আমি দেখেছি, তা ভুলতে পারছি না।' মুহাম্মদ এতটাই অবুঝ ছিল যে, তাকে খাইয়ে দিতে হতো। এমনকি তার ডায়াপার তার মাকেই পরিবর্তন করে দিতে হতো। নাবিলা বলেন, 'সে ছিল এক বছর বয়সি শিশুর মতো। আমি তাকে খাইয়ে দিতাম। তার ডায়াপার পরিবর্তন করে দিতাম। তার সঙ্গে তারা কী করেছে এবং কীভাবে তাকে এভাবে মরতে দিয়েছে, আমি যেন ভাবতেও পারি না।' মুহাম্মদের ৭১ বছর বয়সি মা জানিয়েছেন, ইসরাইলিদের হামলার সময় তারা বাড়িতে ১৬ জন ছিলেন। যার মধ্যে তার দুই ছেলে, তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা ছিল। ইসরাইলিদের ছোড়া বোমা যেন গায়ে আঘাত না হানে, সে জন্য শিশুরা বাথরুমে অবস্থান করছিল। কিন্তু মুহাম্মদকে ঘরের ভেতরই রেখেছিলেন তারা। ফলে কুকুরটি প্রবেশ করে তাকে প্রথমেই কামড়ে ধরে। তার মা বলেছেন, কুকুরটি তার বুকে কামড় দেয়। এরপর হাত কামড়ে ধরে সেটি ছিন্নভিন্ন করতে থাকে। মুহাম্মদ চিৎকার করছিল আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। ওই সময় তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। মুহাম্মদ কথা বলতে না পারলেও কুকুরের হামলার সময় ভয়ে চিৎকার করতে করতে সে বলে ফেলে, 'এই, হয়েছে'। জানি না কীভাবে সে এই বাক্য উচ্চারণ করল। আমরা কখনো তাকে কথা বলতে শুনিনি' বলেন তার মা। কুকুর যখন হামলা করে তখন তিনি ইসরাইলি সেনাদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, তার ছেলে প্রতিবন্ধী। একটা সময় কুকুরটিকে ছাড়ায় তারা। কিন্তু মুহাম্মদকে নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা রুমে। তার মা তাকে ছেড়ে দিতে বললেও দেওয়া হয়নি। এর বদলে ওই রুমে একজন চিকিৎসক প্রবেশ করে তাকে চেতনাশক প্রয়োগ করে। এরপর আর মুহাম্মদের কোনো কথা বা চিৎকার শুনতে পাওয়া যায়নি। তার মা জানিয়েছেন, এক সেনাকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, মুহাম্মদ কোথায়? জবাবে সে বলে 'মুহাম্মদ আর নেই।' এরপর ওই বাড়ির সবাইকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করে ইসরাইলি সেনারা। থেকে যায় শুধু মুহাম্মদ। সাতদিন পর দখলদার ইসরাইলিরা যখন এলাকাটি ছেড়ে চলে যায়, তখন তারা ফিরে আসেন। এসেই দেখেন তাদের মুহাম্মদ গলিত অবস্থায় পড়ে আছে।