গাজার আরেকটি বিদ্যালয়ে ইসরাইলি হামলা, নিহত ২৯

চার দিনে গাজার চারটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালাল ইসরাইল। প্রতিটি বিদ্যালয়ই বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে দক্ষিণের খান ইউনিসের পাশে আবাসান শহরের একটি বিদ্যালয়ে

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গাজায় খান ইউনিসের বিদ্যালয়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় আহত কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন
ফিলিস্তিনের গাজায় আরও একটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। মঙ্গলবারের এই হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। গাজার হামাস সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে চার দিনে গাজার চারটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালাল ইসরাইল। প্রতিটি বিদ্যালয়ই বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে দক্ষিণের খান ইউনিসের পাশে আবাসান শহরের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে তাঁবু দিয়ে তৈরি আশ্রয়শিবিরে বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিরা ছিলেন। ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিস ও গাজা নগরীর বিভিন্ন অংশ খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের পর এসব এলাকা থেকে হাজারও মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার তিনটি প্রধান হাসপাতালের কার্যক্রম। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা এখনো চলছে। গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ৮৮ হাজারের বেশি। এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। এতে শেষ পর্যন্ত এই আলোচনা সফল হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, সোমবার স্কুলে হামলা ছাড়াও ইসরাইলি হামলায় গাজা নগরে এক বাড়িতে ছয়জন, মধ্য গাজার আল-নুসেইরাত ও দেইর আল-বালাহ এলাকার দুটি বাড়িতে ৯ জন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া মধ্য গাজার আল-বুরেইজ আশ্রয়শিবিরে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইলকে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা। তাদের সহায়তায় এই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতা করে আসছে কাতার ও মিসর। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ইসরাইল গাজায় তাদের হামলা জোরদার করেছে। ইসরাইলি হামলার মুখে নতুন করে গাজাবাসী বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। উম্মে তামের নামের এক নারী রয়টার্সকে বলেন, এ নিয়ে সাতবার তার পরিবার গাজায় আশ্রয়স্থল পরিবর্তন করেছে। ইসরাইল গাজা নগর মুছে ফেলেছে। ইসরাইল সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, 'আমরা আর নিতে পারছি না। প্রাণহানি ও নিগ্রহের ঘটনা যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের এখন একটাই চাওয়া-যুদ্ধবিরতি।' অন্যদিকে আমিন আবেদ একজন ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মীকে গত সোমবার বিকালে বাড়ির পাশ থেকে মুখোশধারী ব্যক্তিরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর মারধর করা হয় আমিনকে। এখন এই অধিকারকর্মী গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসাধীন আমিন বিবিসিকে বলেন, '৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামাসের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর অধিকার আমার আছে। এটা বন্ধ করব না আমি।' গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামলা চালায় হামাস। ওইদিনই গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা এখনো চলছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ। এ তথ্য জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা ও ব্যাপক প্রাণহানির কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গাজাবাসীর মধ্যে হামাসের প্রতি ক্ষোভ ক্রমে বাড়তে শুরু করেছে। আমিন জানান, পাঁচজন মুখোশধারী ব্যক্তি বন্দুক ও বড় আকারের ধারাল ছুরি নিয়ে এসেছিল।