ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইইউ) নির্বাচনে হারার পর সময়ের আগেই ফ্রান্সের 'ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি' বা পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। স্ন্যাপ ইলেকশন বা আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। ফ্রান্সে নিজের জনপ্রিয়তা নতুন করে তৈরি করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ম্যাখোঁ। কিন্তু তিনি যা ভেবেছিলেন, বাস্তবে তা হয়নি। তথ্যসূত্র : ডিডাবিস্নউ নিউজ
গোটা ইউরোপের মতো ফ্রান্সেও দক্ষিণপন্থিদের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে তার প্রতিফলন দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে অতি দক্ষিণপন্থিদের জনপ্রিয়তা কমাতে জোটবদ্ধ হয়েছিল ফ্রান্সের বামপন্থি দলগুলো। এটি বৃহত্তর জোট হিসেবে সামনে এসেছিল। যার মধ্যে অতি ছোট বামপন্থি দল যেমন আছে, তেমনই সমাজতান্ত্রিক, গ্রিন পার্টির মতো দলও আছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল দক্ষিণপন্থিদের জনপ্রিয়তা কমানো।
জোটের নাম দেওয়া হয়েছিল 'নিউ পপুলার ফ্রন্ট'। রোববারের নির্বাচনের পর দেখা গেল, সেই জোট সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। যদিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় তারা পৌঁছাতে পারেনি। সব মিলিয়ে তাদের দখলে পার্লামেন্টের ৫৭৭ আসনের মধ্যে ১৮২টি। তার ঠিক পরেই আছে ম্যাখোঁর মধ্যপন্থি দলের নেতৃত্বে তৈরি জোট 'এনসেম্বল'। তৃতীয় স্থানে দক্ষিণপন্থি 'এনআর'। আর চতুর্থ স্থানে রিপাবলিকান দল।
সোমবার ভোটের ফলের পূর্বাভাস দেখেই বামপন্থি জোটের অন্যতম নেতা জঁ লুক মেলঁশঁ ঘোষণা দেন, তারাই সরকার গড়বেন। 'লেফট উইং ফ্রান্স আনবোড' (এলএফআই) দলের নেতা তিনি। এই ঘোষণার সময় তার পাশে ছিলেন জোটের অন্য নেতারাও। এরপর গ্রিন পার্টির প্রধানও একই কথা বলেন। তিনি জানান, 'আমরা জিতেছি। আমরাই সরকার গঠন করব।'
বামপন্থিদের মনোভাব
সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনায় বামপন্থি দলগুলো তাদের মতামত স্পষ্ট করে জানিয়েছে। সেই মতামত ম্যাখোঁর অভিমতের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ফিলিস্তিনের গাজার ঘটনায় তারা সরাসরি ইসরাইলকে কাঠগড়ায় তুলেছে।
মেঁলশঁ-এর মনোভাব 'অ্যান্টি সেমাটিক' বলেই সে সময় মনে করা হয়েছিল। অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ন্যাটোর যথেষ্ট সমালোচনা করেছিলেন মেঁলশঁ। তার বক্তব্য ছিল, ন্যাটো রাশিয়াকে উত্যক্ত করছে। ন্যাটো থেকে ফ্রান্সের সরে আসা উচিত বলেও তিনি মতপ্রকাশ করেছিলেন। বামপন্থি জোটে এলএফআই'র পরেই শক্তিশালী দল গ্রিন পার্টি। এরপরেই আছে ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টি।
নতুন জোটবদ্ধ সরকার কি গড়া সম্ভব?
মধ্যপন্থিদের সঙ্গে জোটবদ্ধ সরকার গড়তে চান না মেঁলশঁ-এর মতো নেতা। ম্যাখোঁও চান না মেঁলশঁ-এর মতো নেতার সঙ্গে সরকার তৈরি করতে। কিন্তু ফ্রান্সে কোনো জোটই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে যে দলই সরকার গঠন করবে, পার্লামেন্টে তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। এর আগে ২০২২ সালে অতি দক্ষিণপন্থিদের হারাতে সবাইকে এক ছাতার তলায় আসার আহ্বান জানিয়েছিল বামপন্থিরা। এবারও সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থি ও বামপন্থিরা কাছাকাছি আসতে পারবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।