ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে দাঁড়িয়ে তাকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। শনিবার আহমেদাবাদে দলীয় কর্মিসভায় এক বক্তৃতায় রাহুল বলেন, 'কংগ্রেস গুজরাটে জিতবে। এই গুজরাট থেকেই নতুন কংগ্রেসের জন্ম হবে। কংগ্রেসের জন্ম হয়েছিল কোথা থেকে? আমাদের সবচেয়ে বড় নেতা মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ শাসনকালে লড়াইয়ের রাস্তা দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ভয় পেও না, ভয় দেখিও না। এই চিন্তা গুজরাট থেকেই শুরু হয়। ওরা আমাদের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। আমরা সুযোগ পেয়ে গেছি। এবার ওদের সরকার ভাঙব। বিজেপিকে শিক্ষা দেব।' তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ
লোকসভায় রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে বিতর্কে বিজেপি নেতাদের দিকে দেখিয়ে রাহুল বলেছিলেন, 'যারা নিজেদের হিন্দু বলে দাবি করে, সেই বিজেপি সারা দিন হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়ায়।' এরপর বিজেপি ও বজরং দল আহমেদাবাদে কংগ্রেস দপ্তরে হামলা চালায়। কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয়। যার জেরে উল্টো পাঁচ কংগ্রেস নেতাকে আটক করেছে গুজরাটের বিজেপি সরকারের পুলিশ।
এদিন আহমেদাবাদে গিয়ে কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। পাশাপাশি দলীয় কর্মিসভায় বক্তৃতা দিয়ে গুজরাট জয়ের চ্যালেঞ্জ ছোড়েন। দলীয় বৈঠকের পর, রাজকোট গেম জোনে অগ্নিকান্ড, বরোদায় নৌকাডুবি, মোরবি সেতু ভাঙা, সুরাতের অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি।
গুজরাট জয়ের প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী রাহুল অযোধ্যায় বিজেপির পরাজয়ের ভাষ্যটিকে বারবার সামনে রেখে কর্মীদের বলেছেন, 'আমি আপনাদের ভেতরের খবর দিচ্ছি। নরেন্দ্র মোদি বারানসি নয়, অযোধ্যা থেকেই প্রথমে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের দলের পক্ষ থেকে বারবার জরিপ করে তাকে জানানো হয়, তিনি যদি অযোধ্যা থেকে দাঁড়ান, তা হলে হেরে যাবেন। তার রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাবে। তাই বারানসি থেকেই তাকে দাঁড়াতে হয়। সেখানে আমরা একটা-দুটো ভুল করেছি, না হলে মোদিকে হারিয়ে দিতাম। কোনো মতে দেড় লাখ ভোটে জিতে নিজের মানসম্মান বাঁচিয়েছেন।' রাহুলের বক্তব্য, 'যে রামমন্দির আন্দোলন লালকৃষ্ণ আদভানি শুরু করেছিলেন, তার আসন ছিল অযোধ্যা। সেই অযোধ্যায় ইনডিয়া জোট বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছে। এটা কম বড় কথা নয়।'
নির্বাচনে গুজরাটে কংগ্রেসের পক্ষে যে জেতা সম্ভব, সেই বিশ্বাস স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়ে রাহুলের বক্তব্য, "আপনারা ভাবতে পেরেছিলেন, অযোধ্যায় বিজেপি হারবে? নরেন্দ্র মোদি কোনো মতে সম্মান বাঁচাবেন? এই গুজরাটেও অযোধ্যার মতোই হারবে বিজেপি। আপনাদের শুধু গুজরাটের জনতাকে বলতে হবে, ভয় পাবেন না। কৃষক, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়ে বলতে হবে। গত নির্বাচনে আমরা মোদির সঙ্গে ঠিক মতো লড়াই করিনি। কিন্তু ২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটে জান দিয়ে লড়েছি চার মাস। এতে মাত্র ১৬ আসনের ব্যবধানে হেরেছি। পরের ভোটের এখনো তিন বছর বাকি আছে। আমরা বিপুলভাবে জিতব। মোদির 'ভিশন'-এর বেলুন ফেটে গেছে!''
লোকসভার প্রসঙ্গ তুলে রাহুল বলেন, 'আমি অধিবেশন কক্ষে মোদির উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে বলেছি, আপনি নিজেই বলেছেন যে, আপনি বায়োলজিকাল নন। আপনার সঙ্গে ঈশ্বরের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। তা-ই যদি থাকবে, তা হলে অযোধ্যায় হারলেন কীভাবে?' তার কথায়, লোকসভা ভোটের ইশতেহার বানানোর সময় এক লাখ মানুষের মতামত শোনা হয়েছিল। তাই এত জোরালো হয়েছিল কংগ্রেসের ইশতেহার। গুজরাট ভোটের ইশতেহার তৈরির সময়ও রাজ্যের সবার কথা শোনা হবে। মোদিকে উদ্দেশ্য করে রাহুল বলেন, 'যে ব্যক্তি নিজেকে ঈশ্বর ভাবেন আর বাকিদের নশ্বর মানবপ্রজাতি, তিনি গুজরাটের সাধারণ মানুষকে দিকদর্শন দেবেন কী করে?' পরে তিনি তার 'এক্সে' পোস্ট করেন, 'বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার হিংসা আর ঘৃণার প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু অযোধ্যায় যে ভাবে ইনডিয়া তাদের হারিয়েছে, সে ভাবে গুজরাটেও হারাবে।'