ভারতের লোকসভা ভোটের ফল নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মত ছিল, নাগরিকরা বিজেপির হিন্দুরাষ্ট্রের আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবার অমর্ত্য মন্তব্য করলেন, ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে কিছুটা আটকানো গেছে। পাশাপাশি ভারতীয় 'ন্যায় সংহিতা' নিয়েও বিজেপির সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তার দাবি, সংবিধান বদল করতে যেসব আলোচনার প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ প্রতীচী ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতি বছরই একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এবার সেই আলোচনাচক্রের বিষয় ছিল, 'কেন স্কুলে যাই : সহযোগিতার সহজ পাঠ'। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে ওই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন প্রতীচী ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অমর্ত্য। আলোচনায় ছিলেন অধ্যাপক জঁ দ্রেজ। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থী ওই আলোচনাচক্রে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেন অমর্ত্য। বক্তব্যে চলে আসে লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, 'স্কুলে পর্যন্ত আলোচনা পৌঁছে গিয়েছিল! ভারতকে কী ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র করা যায় সেই আলোচনা হতো। কিন্তু, আমাদের জানা দরকার, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য বাচ্চাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তাই ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে আটকানো গেল।' উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ লোকসভার আসনের ফলের প্রসঙ্গ টেনে এনেও বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন অমর্ত্য। তিনি বলেন, 'ওরা এটা মানতে পারল না, যেখানে বড় মন্দির তৈরি হলো, সেখানে একজন সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) দলের প্রার্থী, হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন।' পরক্ষণেই অর্থনীতিবিদের সংযোজন, 'দেখুন, ভারত একেবারেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়। তবে বহু ধর্মের দেশ তো বটেই।' সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছেন। প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মনমোহন সিংহের সরকারের সময়ে অমর্ত্যের সভাপতিত্বে তৈরি হয় 'নালন্দা মেন্টর গ্রম্নপ'। ২০১২ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য হন তিনি। আচার্য হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয় মোদি সরকারের আমলে- ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন অমর্ত্য। ২০১৬ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার দীর্ঘ সম্পর্ক ছিন্ন হয়। পরিচালনা কমিটি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি। আলোচনায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও আক্ষেপ করেছেন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। এক সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য ছিলেন তিনি। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য বলেন, 'বুদ্ধদেবের (গৌতম বুদ্ধ) থেকে নানা কিছুর শেখার আছে। নালন্দায় আগের সরকার আর বর্তমান সরকার কিছু করেনি।' আগেও মোদি সরকারের নোটবন্দি-সহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন অমর্ত্য। পাল্টা বিশ্বভারতীর জমি-বিতর্কে তাকে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। শনিবার দেশের বেকার সমস্যা নিয়েও কথা বলতে গিয়ে অমর্ত্য অর্থনৈতিক অবকাঠামোর নিন্দা করেছেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি ভারতীয় ন্যায় সংহিতা নিয়ে মন্তব্য করেন। তার কথায়, 'একটা সংবিধান বদলাতে গেলে যে আলোচনা দরকার, সেগুলো হয়নি। আরও আলোচনার তো প্রয়োজন ছিল। তার প্রমাণ (আলোচনা হয়েছে বলে) তো দেখি না।'