সরে যাওয়ার চাপ উপেক্ষা

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেনই বাইডেন

'কেউ আমাকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে না। আমি নির্বাচনী লড়াই ছাড়ছি না প্রতিযোগিতায় আছি'

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত সপ্তাহে তার দুর্বল বিতর্কের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যেতে তার ওপর চাপ কার্যত বেড়েই চলেছে। তবে সব চাপ উপেক্ষা করে লড়াইয়ে 'শেষ পর্যন্ত' থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন বাইডেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার তার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলেছেন এবং ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ সময় ২০২৪ সালের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দেন তিনি। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চার বছর আগের মতো এবারের নির্বাচনেরও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আসন্ন এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন এই দুই প্রার্থী। পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইসু্য, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইসু্যতে তারা কথা বলেন। সেই বিতর্কে বাইডেনের 'পারফরম্যান্স' ছিল অত্যন্ত দুর্বল। গত সপ্তাহের সেই বিতর্কের পর থেকে বাইডেনকে নিয়ে আমেরিকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই বলছেন, ৮০ বছরের বেশি বয়সি বাইডেনের এবার আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত নয়। কারণ, তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। বিতর্কের সময় প্রতিপক্ষের কথার জবাবও দিতে পারছেন না। এ ছাড়া ট্রাম্পও এনিয়ে বাইডেনকে আক্রমণ করে চলেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই বাইডেনের বয়স এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। এমন অবস্থায় বুধবার প্রচারণা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা ও গভর্নরদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাইডেন। এর মাধ্যমে তিনি মূলত গত সপ্তাহের বিতর্কে নড়বড়ে পারফরম্যান্সের পর তাকে নির্বাচনী লড়াই বাদ দেওয়ার আহ্বানগুলো ঝেড়ে ফেললেন। বাইডেনের এই ফোন কল সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার প্রচার দলের উদ্বিগ্ন সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তাদের বলেন, তিনি (নির্বাচনী দৌড় ছেড়ে) কোথাও যাচ্ছেন না। ওই বৈঠকের পর মাত্র তিনজন গভর্নর- নিউইয়র্ক, মিনেসোটা এবং মেরিল্যান্ডের নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং গত সপ্তাহের বিতর্কে খারাপ পারফরম্যান্স সম্পর্কে বিশদ আলোচনার পর বাইডেনের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রম্নতি দেন তারা। মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর বলেন, 'প্রেসিডেন্টের পেছনে সবসময়ই আমাদের সমর্থন ছিল।' ডেমোক্রেটিক গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ও মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জো বাইডেনের গত বৃহস্পতিবার রাতের বিতর্কের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল। তবে তিনি বলেছেন, বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য উপযুক্ত বলে তিনি মনে করছেন। অন্যদিকে, 'উইসকনসিন রেডিও স্টেশন'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন জানিয়েছেন, বিতর্কে তার ভুল ছিল। তবে বিষয়টি ভুলে গিয়ে ভোটারদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাকে পুনরায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী। কেউ আমাকে প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে না। আমি ছাড়ছি না।' বাইডেন বলেন, 'আমাকে এটি স্পষ্ট ও সহজভাবে বলতে দিন। আমি প্রতিযোগিতায় থাকছি।' এদিকে, নিজের প্রচারণা দলের কাছে পাঠানো পৃথক এক ই-মেইলে জো বাইডেন বলেছেন, 'কেউ আমাকে বাইরে ঠেলে দিচ্ছে না। আমি (নির্বাচনী লড়াই) ছাড়ছি না। আমি শেষ পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় আছি।' এ ছাড়া আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে সাহায্য করার জন্য সমর্থকদের 'অর্থ' দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের পর প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, ৮১ বছর বয়সি বাইডেন প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন কিনা। বিতর্কে বারবার খেই হারানো, দুর্বল কণ্ঠস্বর এবং তার কিছু উত্তর বোঝাই কষ্টকর ছিল। এটি দলের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তার ফিটনেস এবং নির্বাচনে জেতার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। এরপর জনমত জরিপগুলোতে যখন দেখা যায়, তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে পার্থক্য বাড়ছে, তখন লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার ওপর চাপ বাড়তে থাকে। বিতর্কের পর নিউইয়র্ক টাইমসের এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প এখন তার চেয়ে ছয় পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন, যা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ব্যবধান। গত বুধবার এই জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। 'সিবিএস'র আরেকটি জরিপে দেখা যায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজ্যগুলোতে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প তিন পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। ওই জরিপ অনুযায়ী সাবেক প্রেসিডেন্ট জাতীয়ভাবেও এগিয়ে আছেন।