শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাজ্য লেবার শিবিরে আশা-উদ্দীপনা

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাজ্য লেবার শিবিরে আশা-উদ্দীপনা

জরিপের পূর্বাভাস সত্য হলে যুক্তরাজ্যে শেষ পর্যন্ত কনজারভেটিভদের ১৪ বছরের শাসনাবসান ঘটেই যাবে। আর শুরু হবে কিয়ার স্টারমারের লেবার নেতৃত্বাধীন সরকারের নতুন অধ্যায়।

যুক্তরাজ্যে আজ সাধারণ নির্বাচনে প্রায় সর্বজনীনভাবে এ ধারণই করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক হেরে যাবেন। আর তাই ব্রিটিশ ভোটাররা দেশে ১৪ বছরের কনজারভেটিভ শাসনের অবসান দেখার জন্য এক রকম প্রস্তুত।

ওদিকে কনজারভেটিভ (টোরি) দলের প্রবল প্রতিপক্ষ লেবার পার্টি জনগণের সামনে সতর্কতার সঙ্গে বার্তা দিলেও দলের ভেতরে ভেতরে রয়েছে আশা-উদ্দীপনার আমেজ।

কারণ লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার, যিনি একসময় ছিলেন মানবাধিকার আইনজীবী, তার এবার আদালত কক্ষ থেকে সোজা ডাউনিং স্ট্রিটে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে। তিনি আছেন ক্ষমতায় আরোহণের দ্বারপ্রান্তে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার নানা চ্যালেঞ্জে ভরা প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে সবচেয়ে বড় জুয়াটি খেলেছেন আগাম নির্বাচন ডেকে। কিন্তু জরিপগুলোতে কনজারভেটিভ দলের সমর্থনে যে ধস দেখা গেছে, তার মোড় ঘুরাতে সুনাককে হিমশিম খেতে হয়েছে এবং তিনি পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে আছেন এমনটিই দেখা যাচ্ছে।

অথচ লেবার নেতা স্টারমারকে তেমন কোনো ক্যারিশমা এবং তারকা গুণ ছাড়াই বিপুল জয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

অবশ্য আগের সব প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার কিংবা টনি বেস্নয়ারের মতো ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব স্টারমারের না থাকলেও তিনি লেবার পার্টিকে নির্বাচনে জয় পাওয়ার যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। বিশেষ করে ১৯৩০ এর দশকের নির্বাচনে লেবারের বড় ধরনের পরাজয়ের পর। আর এ কাজ স্টারমার করেছেন ওই পরাজয়ের পাঁচ বছরেরও কম সময়ে এবং তিনি পার্লামেন্টে যাওয়ার এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে।

তিন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানমন্ত্রীর নানা ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে লেবার দলকে ওপরে টেনে তুলেছেন স্টারমার। ভোটারদেরকে বারবারই সেই সব ব্যর্থতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। গত শনিবারই এক সমাবেশে ভোটারদের তিনি বলেছেন, তারা কি করেছে সেটি ভুলে যাবেন না। পার্টিগেট কেলেঙ্কারি ভুলে যাবেন না, কোভিড কন্ট্রাক্ট, মিথ্যাচার, ঘুষের কথা ভুলে যাবেন না।'

এভাবে বেশকিছু মানুষের ভোট দলে টেনেছেন স্টারমার। লেবার নেতা করবিনের আমলে দলে যে ইহুদি-বিদ্বেষের শেকড় ছিল তাও তিনি উপড়ে ফেলেছেন। বর্তমান জরিপগুলো তার দলের জয়ের যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, তা যদি সত্য হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত কনজারভেটিভ দলের ১৪ বছরের শাসনের যবনিকাপাত ঘটেই যাবে। আর সে জায়গায় শুরু হবে সাবেক ব্যারিস্টার কিয়ার স্টারমারের মধ্যবাম দলের নেতৃত্বাধীন সরকারের নতুন অধ্যায়।

নির্বাচনী প্রচারে স্টারমার ভোটারদেরকে বলছেন, 'অপনারা পরিবর্তন চাইলে লেবারকে ভোট দিন। যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ আপনার হাতে। আমরা পরিস্থিতির মোড় ঘুরাতে পারি। আমরা ব্রিটেনকে পুনর্গঠন করতে পারি।'

প্রধানমন্ত্রী সুনাক নির্বাচন ঘোষণার পরপরই স্টারমার বলেছিলেন, এই ভোট দেশকে ভালো ভবিষ্যতের দিকে টেনে নেওয়ার একটি সুযোগ।

এ ব্যাপারে ইংল্যান্ডের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের অধ্যাপক স্টিভেন ফিল্ডিং বলেন, 'স্টারমারের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ যাতে লেবারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পায় সেই চেষ্টা করা এবং তিনি এতে খুবই সফল হয়েছেন।'

ওদিকে কনজারভেটিভরা (টোরি) ভোটারদের 'সিস্নপ ওয়াক' না করা এবং লেবারকে 'বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ' ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। টোরিদের এই পাল্টা প্রচারের মুখে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলটি মানুষের সমর্থন টানার জন্য খুব একটা ঔদ্ধত্য দেখাতে চাইছে না।

সে কারণে লেবার পার্টি প্রকাশ্যে সতর্কভাবে পা ফেলছে। কিন্তু দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেতরে ভেতরে বেশ আশাবাদী, এমনকি তারা উদ্দীপনাও বোধ করছেন। যদিও গত ছয় সপ্তাহে যে কোনো গড়বড় হয়নি তা নয়। আবার কিয়ার স্টারমার রাজনৈতিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে খুব বেশি সতর্ক বলে অভিযোগও উঠেছে।

তবে পার্টির নেতারা তারপরও সন্তুষ্ট যে, লেবার পার্টির প্রচারের যে মূল চালিকাশক্তি সেটি গতিপথ থেকে ছিটকে পড়েনি। তারা জরিপে এগিয়ে থাকার উলেস্নখযোগ্য সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে।

সূত্র: বিবিসি/নিউ ইয়র্ক টাইমস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে