চলতি বর্ষার বন্যা দিনে দিনে বিপর্যয়কর রূপ নিচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এ রাজ্যটির ১৯টি জেলা এরই মধ্যে বন্যা কবলিত এবং এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ছয় লাখ ৪৪ হাজার ১২৮ জন মানুষ। ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এরই মধ্যে কমপক্ষে ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী চীনের সীমান্তবর্তী অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধসে বেশ কয়েকটি রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচু্যত হয়েছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি
বন্যা কবলিত জেলাগুলো হলো কামরুপ, গোলাঘাট, মাজুলি, লাখিমপুর, করিমগঞ্জ, কাছাড়, ধেমাজি, মুড়িগাঁও, উদলগুড়ি, ডিব্রম্নগড়, তিনসুকিয়া, নগাঁও, শিবাসাগড়, দারাং, নলবাড়ি, সোনিতপুর, তামুলপুর, বিশ্বনাথ এবং জোড়হাট। আসাম রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর এএসডিএমএ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে অন্তত ৮টির পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যায় এরই মধ্যে ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে, আর একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। এএসডিএমএ'র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ১৬ জনকে নিয়ে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বন্যা, ঝড় ও ভূমিধসের জেরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৃতু্যর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৫ জনে।
বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর আসামের লাখিমপুরে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ধেমাজি এবং কাছাড়। এ দুই জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন যথাক্রমে এক লাখের বেশি মানুষ এবং ৬৬ হাজার ১৯৫ জন মানুষ।
রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত মোট ৭২টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এসব শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন আট হাজার ১৪২ জন মানুষ। শিগগিরই আরও ৬৪টি শিবির খোলা হবে বলে জানিয়েছে দপ্তর।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধারে দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে সেনা, বিমান, আধা সামরিক বাহিনী এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও স্থানীয় প্রশাসন। ধেমাজি জেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করেছে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। আর তিনসুকিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সোমবার এক হাজার ২৯৩ জনকে উদ্ধার করেছে সেনা আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
যে আটটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেগুলো হলো- ব্রহ্মপুত্র, সুবানসিরি, দিখৌ, দিসাং, বুড়িদিহিং, জিয়া-ভারালি, বেকি ও কুশিয়ারা।
সোমবার এক বিবৃতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী অরুণাচল প্রদেশে ব্যাপক বর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্টি পাহাড়ি ঢল এই বন্যার জন্য দায়ী। তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র সঙ্গে এরই মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়েছে তার এবং কেন্দ্রীয় সরকার আসামকে যাবতীয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।