ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এলাকাবাসীর বাড়িঘর খালি করার নির্দেশের পর গাজার পূর্বাঞ্চলীয় দ্বিতীয় শহর খান ইউনিস ছেড়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। দুই সপ্তাহ আগে এলাকাবাসীর বাড়িঘর খালি করার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সেনাবাহিনী। আবারও হামলা চালানোর আগে সোমবারের মধ্যেই নির্দেশ কার্যকরের ঘোষণাও দেয় তারা। এরপর থেকেই যে যেভাবে পারছেন, হেঁটে বা গাড়িতে জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে পালাচ্ছেন বারবার বাস্তুচু্যত হওয়া ফিলিস্তিনিরা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
প্রত্যক্ষদর্শীরা রাতভর ও সকালেও খান ইউনিসের আশপাশে একাধিক ইসরাইলি হামলার কথা জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এসব হামলায় আটজন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
ওই এলাকার ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতাল থেকে পালাচ্ছেন রোগী ও চিকিৎসা কর্মীরাও। রেডক্রস রোগীদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করেছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালটিতে মাত্র তিনজন রোগী রয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক।
খান ইউনিসের পূর্বাংশের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরাইলি ফোন নাম্বারগুলো থেকে অডিও বার্তা পেয়েছেন তারা, আর তাতে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের ও আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচু্যতদের উদ্দেশে সামাজিক মাধ্যম 'এক্স'-এ ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচয় আদ্রের করা পোস্টে বলা হয়েছে, 'আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আপনাদের অবিলম্বে মানবিক অঞ্চলে চলে যেতে হবে।'
ইসরাইল বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিদের নগরীর পশ্চিম দিকে সরে যেতে বলেছে। তবে অধিবাসী এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে কোথাও যাওয়ার নিরাপদ জায়গা নেই। খান ইউনিসের বেশির ভাগ এলাকাই চলতি বছরের শুরুর দিকে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিছু অধিবাসী পরে খান ইউনিসে ফিরে এসেছিলেন। আবার রাফাহতে ইসরাইলের হামলা থেকে বাঁচতেও খোনে কিছু অধিবাসী ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তারা আবারও নতুন হামলার হুমকির মুখে সেখানে থেকে চলে যাচ্ছেন।
গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ৫৫ বছর বয়সি তামের ছয়বার বাস্তুচু্যত হন। এখন তারা কোথায় যাবেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত ও কাঠামোগতভাবে অনিরাপদ ভবনগুলোতেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে বেঁচে থাকতে বাধ্য হন তারা।
গত সোমবার খান ইউনিসের যে এলাকা থেকে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ রকেট হামলা চালিয়েছিল, সেখানে এরই মধ্যে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আরও হামলার ঘোষণা দিয়েছে তারা। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত প্রায় ৩৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত কমপক্ষে ৮০ হাজার ৬০ জন।
ইসরাইলে রকেট হামলা ইসলামিক জিহাদের
ফিলিস্তিনি কট্টরপন্থি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ সোমবার ইসরাইল লক্ষ্য করে এক পশলা রকেট ছুড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা গাজার সীমান্ত বেড়া সংলগ্ন বেশ কয়েকটি ইসরাইলি এলাকা লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে। তারা বলেছে, আমাদের ফিলিস্তিনি লোকজনের বিরুদ্ধে জায়নবাদী শত্রম্নদের অপরাধের প্রতিক্রিয়ায় এসব রকেট ছোড়া হয়েছে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পরপর প্রায় ২০টি রকেট ছোড়া হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই হামলা দেখিয়ে দিয়েছে, তুলনামূলক ক্ষুদ্র একটি ভূখন্ড গাজায় ৯ মাস ধরে অবিরাম হামলা চললেও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো এখনো রকেট ক্ষমতার অধিকারীই রয়ে গেছে; অথচ ইসরাইলের বিরুদ্ধে হুমকি প্রতিরোধ করাই তাদের গাজা অভিযানের লক্ষ্য বলে দাবি তাদের।
গত সোমবার এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রকেটগুলো খান ইউনিস এলাকা থেকে ছোড়া হয়েছে। খান ইউনিসের অনেকের ধারণা, ইসরাইলি বাহিনীর ওই নির্দেশনার অর্থ হতে পারে যে, কয়েক সপ্তাহ আগে ছেড়ে যাওয়া এই এলাকায় তারা আবার ফিরে আসতে পারে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'হামাসের সামরিক সক্ষমতা নিঃশেষ করে দেওয়ার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন তারা, এখন কম তীব্র অভিযান চলবে। হামাসের সন্ত্রাসী সেনাবাহিনী নির্মূল করার শেষ পর্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা আর এর অবশিষ্টাংশের ওপর আঘাত চলতে থাকবে।'
গাজার কয়েকটি অংশে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরাইলি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনী এসব এলাকা থেকে কয়েক মাস আগে চলে গিয়েছিল।
ইসরাইলি বাহিনীর ট্যাংকগুলো পঞ্চম দিনের মতো গাজার পূর্বাঞ্চলীয় শেজাইয়া শহরের প্রান্তীয় অঞ্চলের এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা নগরীর পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের আরও গভীরে ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। সোমবার শেজাইয়ায় লড়াইয়ে তারা বহু সংখ্যক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে। আর হামাস বলেছে, রাফাহতে তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি বাহিনীকে প্রলুব্ধ করে একটি বাড়িতে নিয়ে ফাঁদে ফেলার পর সেটি উড়িয়ে দিয়েছে।