ইসরাইলকে ফের অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকা
স্থগিতাদেশ তুলে নিচ্ছে
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখন্ড গাজার রাফাহ অভিযানকে কেন্দ্র করে ইসরাইলে অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আমেরিকা, তা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন। আমেরিকা ও ইসরাইলের একাধিক সরকারি কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'এক্সিওস'কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, শিগগরিই ইসরাইলকে এক হাজার ৮০০টি বোমার একটি চালান পাঠানো হবে। প্রতিটি বোমার ওজন ৫০০ পাউন্ড বা ২২৬ কিলোগ্রাম। গত এপ্রিলে এই চালানটির ওপরই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের অতর্কিত হামলার জবাবে গাজায় যে অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী, এর অংশ হিসেবে গত মার্চ মাসে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে সেনা অভিযান চালানোর পরিকল্পনা প্রকাশ করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন ইসরাইলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ইসরাইলের সেনা অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। বাইডেনের বক্তব্য ছিল, ইসরাইলি বাহিনী রাফাহতে অভিযান শুরু করলে বিপুল পরিমাণ প্রাণহানি ঘটবে। রাফাহতে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে নেতানিয়াহুকে বেশ কয়েবার আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে নেতানিয়াহু নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তার বক্তব্য ছিল- হামাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি রাফাহ। তাই হামাসকে চিরতরে নিষ্ক্রিয় করতে হলে রাফাহতে অভিযান অপরিহার্য।
এই নিয়ে বাইডেন প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে কয়েক সপ্তাহ টানাপড়েন চলার পর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ইসরাইলকে অস্ত্র সহায়তার একটি চালানে স্থগিতাদেশ দেন বাইডেন। এর মধ্যেই গত মে মাসের শুরু থেকে রাফাহতে অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কারণ প্রসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, হামাসের পাশাপাশি সম্প্রতি লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর সঙ্গেও তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ)। মূলত এ কারণেই ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ ফের 'স্বাভাবিক' করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়াশিংটন।
ছেলের সামনে মাকে পিষে দিল ইসরাইলি ট্যাংক
গাজা উপত্যকার গাজা সিটিতে ছেলের সামনে মাকে পিষে দিয়েছে দখলদার ইসরাইলের একটি ট্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা 'ইউরো-মেড'। সংস্থাটি বলেছে, ৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা সাফিয়া হাসান মুসা আল-জামালের বাড়িতে ইসরাইলি সেনারা হামলা চালায়। এতে তিনি আহত হন। এরপর তার ওপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয় ট্যাংক। সাফিয়ার ছেলে মুহান্নাদ আল-জামাল এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন।
মুহান্নাদ বলেছেন, ঘটনার সূত্রপাত হয় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায়। ওই সময় ইসরাইলি সেনারা গাজা সিটির শেজায়াতে প্রবেশ করে। ইসরাইলিদের গুলি ও বোমা থেকে বাঁচতে তার মা, তিন বোন ও তাদের সন্তানরা ভবনের নিচতলায় চলে আসেন। এরপর সন্ধ্যার পর ইসরাইলি সেনারা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে ঢুকেই ব্যাপক গোলাগুলি শুরু করে তারা। এ ছাড়া বোমাও নিক্ষেপ করে। এতে মুহান্নাদ এবং তার মা আহত হন।
মুহান্নাদের বোন আরেজি মানবাধিকার এই সংস্থাটি জানিয়েছেন, তাদের মাকে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন এক নারী সেনা। এরপর বলা হয়, তাদের মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। মুহান্নাদ জানিয়েছেন, এরপর তাকে এবং তার মাকে ট্যাংকে করে নিয়ে যাওয়া হয় মুস্তাহা চত্বরে। সেখানে নিয়ে গিয়ে তার মাকে রাস্তায় শোয়ানো হয়। এরপর তার ওপর দিয়ে চলে যায় একটি ট্যাংক।
ভয়াবহ সেই ঘটনার কথা মনে করে মুহান্নাদ বলেন, 'যখন আমি এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করি, আমার মনে হয়েছিল- আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি চিৎকার ও কান্না শুরু করি। সেখানে তখন গোলাগুলি শুরু হলে পালিয়ে যাই।'