ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা শহরের কাছে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এই হামলা করা হয়েছে। হামলার আগে ফিলিস্তিনিদের ফের দক্ষিণ গাজায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ওই অঞ্চলের রাফাহ শহরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে সেনারা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আনাদলু, এএফপি
এদিকে গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি হামলায় আরও প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৭ হাজার ৭৬৫। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৮৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এ তথ্য জানিয়েছে ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাকান্ডে ৪৭ জনকে হত্যা করেছে এবং এতে আরও ৫২ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফিলিস্তিনি সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক হামলায় শেজাইয়াতে এখন পর্যন্ত অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন।
গাজা শহরের শেজাইয়ার আশপাশের বাসিন্দারা বলেছেন, বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে ট্যাংক চলাচলের আওয়াজ এবং গুলির শব্দে বিস্মিত হয়েছিলেন তারা। শহরটিতে সারারাত বোমাবর্ষণের পর ড্রোন হামলাও চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। যুদ্ধের প্রথমদিকে এই অঞ্চলে এ ধরনের হামলা হয়েছিল।
গাজা শহরের এক বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সি মোহাম্মদ জামাল। তিনি বলেন, 'শব্দ শুনে মনে হচ্ছিল আবারও যেন যুদ্ধ শুরু হচ্ছে। একটি সিরিজ বোমা হামলায় ভবনগুলো কেঁপে উঠেছিল। আমাদের এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে।'
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অভিযান শুরুর পর নারী, পুরুষ এবং শিশুরা ব্যাগ ও খাবার নিয়ে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে। পালানোর সময় কিছু পুরুষ আহত শিশুদের কোলে করে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রক্তাক্ত একটি ছেলে শিশুকে কোলে করে নিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেছিলেন, 'ইসরাইলি দখলদারিত্ব আমাদের লক্ষ্যবস্তু করছে। আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন। আপনি দেখছেন এখানে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।'
এদিকে ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, শেজাইয়ায় হতাহতের খবর নিয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই। সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বেসামরিকদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার অভিযোগ এনেছে ইসরাইল। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পথ থেকে বাস্তুচু্যত মানুষকে সরে যেতে সতর্ক করেছে।
শেজাইয়ার বাসিন্দা ও বাস্তুচু্যতদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' করা একটি পোস্ট সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই বলেছেন, 'নিরাপত্তার জন্য আপনাদের অবিলম্বে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের দক্ষিণে মানবিক অঞ্চলে সরে যেতে হবে।'
তবে বাসিন্দারা ও হামাস মিডিয়া বলেছে, ওই পোস্টের আগেই ট্যাংকগুলো শহরটিতে চলে গেছে। ইসরাইল দক্ষিণে রাস্তা অবরোধ করে রাখায় শহরের পূর্ব দিকে গোলাগুলির মধ্যেই বাসিন্দা ও বাস্তুচু্যতরা পশ্চিম দিকে ছুটছেন।
পানি সরবরাহ বাড়াতে ইসরাইলের
সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি
জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ বৃহস্পতিবার বলেছে, ইসরাইল দক্ষিণ গাজার একটি মূল ডিস্যালিনেশন পস্ন্যান্টে শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সম্মত হয়েছে। এতে ১০ লাখ বাস্তুচু্যত মানুষকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সংস্থার মুখপাত্র জোনাথন ক্রিকক্স বলেছেন, 'ইউনিসেফ নিশ্চিত করেছে, দক্ষিণ গাজা ডিস্যালিনেশন পস্ন্যান্টের জন্য মাঝারি ভোল্টেজ ফিডার পাওয়ার লাইন পুনঃস্থাপনের জন্য ইসরাইলের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে।'
প্রায় ৯ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের ২৪ লাখ বাসিন্দার জন্য পানির অভাব দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গাজার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্যানিটেশন এবং পানির সুবিধা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইল ভূখন্ডে শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপ করার পর থেকে কেবলমাত্র বোতলজাত পানি সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
খান ইউনিসের পস্ন্যান্টটি একবার বিদু্যতের সঙ্গে পুনরায় সরবরাহ করা হলে দক্ষিণ গাজার প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচু্যত মানুষের জন্য 'মানবিক মানদন্ডে নূ্যনতম ১৫ লিটার পানি প্রতিদিন পান করার জন্য উৎপাদন করা উচিত।'
ইউনিসেফের মতে, পস্ন্যান্টটি পূর্ণ ক্ষমতায় প্রতিদিন ১৫ হাজার ঘনমিটার বা ১৫ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম।