শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
আমেরিকায় নির্বাচন

ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেনের বিকল্প খুঁজছে!

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এতে বাইডেনের দুর্বল, টলমল বিতর্কে খোদ তার ডেমোক্রেটিক দলের সদস্যরাই হতাশ হয়েছেন। নির্বাচনের আগে দিয়ে বাইডেনের এমন বাজে 'পারফরম্যান্সে' দল ক্ষতির মুখে পড়া নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো যাবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে কথাবার্তা। বাইডেনের বিকল্প খুঁজতেও শুরু করেছেন তারা।

অনেকে বাইডেনকে সরিয়ে নির্বাচনে অন্য কাউকে প্রার্থী করার কথা বলছেন। কিছু ডেমোক্রেট বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানাতে শুরু করেছেন। আবার বাইডেন নিজে থেকে সরে দাঁড়াবেন কিনা সেটি নিয়েও ডেমোক্রেটদের মধ্যে কথা হচ্ছে।

আমেরিকার বর্তমান ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট ৮১ বছরের জো বাইডেন এবং তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের ৭৮ বছরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প- দুজনের বয়সই এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছে উদ্বেগের একটি বড় বিষয়।

বাইডেন শিবির আশা করেছিল, বিতর্কে তিনি প্রাণবন্ত, জোরাল বক্তব্য রাখলে ভোটারদের সেই শঙ্কা দূর করতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো ঘোড়ার মতো চিঁচি আওয়াজে বিতর্কের মধ্যে কখনো কখনো বাইডেন হোঁচট খেয়েছেন। বিশেষ করে বিতর্কের শুরুর দিকে।

বাইডেনের কণ্ঠস্বর নিয়ে হোয়াইট হাউস বলছে, বিতর্কে নামার আগে থেকে তিনি সর্দিতে ভুগছিলেন। কিন্তু ৯০ মিনিটের ভাষণে বাইডেনকে কথা বলতে এবং প্রতিপক্ষ ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। এতে নির্বাচনের চার মাস আগে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর তার বয়স নিয়ে ভোটারদের ভয় দূর হওয়ার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের মধ্যে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, তারা বাইডেনের বিতর্কে মোটেও সন্তুষ্ট হননি।

ওদিকে, বাইডেনের এক শীর্ষ তহবিল জোগানদাতা তো তার পারফরম্যান্সে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেই ফেলেছেন, প্রেসিডেন্ট 'অযোগ্য' প্রমাণিত হয়েছেন। আগস্টে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে বাইডেনের ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে নতুন করে আহ্বান জানানো হবে বলে তিনি আশা করছেন।

প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্ভাবনাময় তিন ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ তিন উপদেষ্টা বলেছেন, বিতর্ক চলার পুরো সময়টাতেই তাদের কাছে টেক্সট মেসেজের বন্যা বয়ে গেছে। এক উপদেষ্টা বলেন, তারা তাদের প্রার্থীকে বাইডেনের বিকল্প হিসেবে সামনে আনার অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছেন।

আরেকজন উপদেষ্টা বলেন, তারা 'বিপর্যয়' লেখা আধাডজনেরও বেশি টেক্সট মেসেজ পেয়েছেন তহবিল জোগানদাতাদের কাছ থেকে। এই দাতারা বলেছেন, এই বিপর্যয় সামলাতে দলের কিছু করা উচিত। তবে বাইডেন সরে না দাঁড়ালে তেমন কিছু করার নেই বলেও তারা স্বীকার করেছেন।

একজন শীর্ষ ডেমোক্রেটিক তহবিল জোগানদাতা এবং বাইডনের সমর্থক বলেছেন, এখন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচার শেষ করার সময়। তিনি বলেছেন, 'ইতিহাসে এই বিতর্কের রাতে বাইডেন সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স করেছেন। তিনি এতটাই খারাপ করেছেন যে, কেউ ট্রাম্পের মিথ্যা বলার দিকে ধ্যানই দেবে না।' এক টেক্সট মেসেজে তিনি লেখেন, 'বাইডেনকে যে এখন সরানো দরকার, সেটি প্রশ্নাতীত।' বাইডেনের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তিনি মেরিল্যান্ড ও মিশিগানের গভর্নরদের নাম প্রস্তাব করেন।

বাইডেনের আরেক ঘনিষ্ঠ সমর্থক এবং ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাও বলেছেন, নতুন একজনকে এখন দলের মনোনয়ন দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে।

তবে বাইডেনের বিকল্প খুব বেশি নেই। তাছাড়া, বাইডেনকে দল এক পাশে সরিয়ে দিতে পারবে কিনা সেটি নিয়েও অনেকে সন্দিহান। বাইডেন ছাড়া কোন প্রার্থী দলের সমর্থন পাবেন, সেটিও যেমন নিশ্চিত নয়, তেমনি সেই প্রার্থী ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে পারবেন কিনা সেটিও নিশ্চিত নয়।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন এরই মধ্যে কাছে এসে পড়েছে। এ রকম একটা সময়ে বাইডেনের সরে দাঁড়ানোটাও হবে নজিরবিহীন। যদিও বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাবে অনেকেই।

কিন্তু বাইডেনকে সরে দাঁড়াতে হলেও সেই পথ হবে দীর্ঘ এবং নড়বড়ে। কারণ আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের প্রাইমারি হয়ে গেছে। আর সেগুলোর প্রতিটিতেই প্রায় সব 'ডেলিগেট' জিতে নিয়েছেন বাইডেন। এ সময় তার সরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বাইডেনকে সরাতে হলে এখন দলের সামনে দুটো পথই আছে। প্রথমত বাইডেনের সম্মতি, আর নয়তো ওই ডেলিগেটদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, যারা বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন।

অবশ্য বাইডেন সরে গেলে তার জায়গায় প্রার্থী কে হবেন, সেটিও একটি প্রশ্ন। জরিপে দেখা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস আমেরিকানদের মধ্যে জনপ্রিয় নন। কিন্তু কমলা হ্যারিস ছাড়া ট্রাম্পকে মোকাবিলা করার মতো হাতে থাকা আর কোনো বিকল্প প্রার্থী এই মুহূর্তে নেই। ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সম্ভাবনাময় দুই বিশিষ্ট প্রার্থী হচ্ছেন, ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম; যারা হতে পারেন বাইডেনের বিকল্প। তবে তারা বলছেন, বাইডেন বিতর্কে যেমনই করে থাকুন না কেন, তারা তার সঙ্গেই আছেন।

'এমএসএনবিসি' টিভি চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে নিউসমকে বাইডেনের সরে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'একটি মাত্র পারফরম্যান্সের কারণে আপনি মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন না। তাই যদি হয়, তাহলে সেটি কী ধরনের দল? তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, পলিটিকো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে