ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকা ও তার মিত্রদের গভীর সম্পৃক্ততার কারণে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে রাশিয়া। তবে এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন জানিয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আরটি, এএফপি
এই পদক্ষেপের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ??'কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তর কমানোর বিষয়টি এমন সব দেশের জন্য একটি আদর্শ চর্চা; যারা শত্রম্নতা বা বৈরিতার মুখোমুখি হয়। ইউক্রেন সংঘাতে পশ্চিমাদের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার কারণে রুশ ফেডারেশন এই ধরনের বৈরী পশ্চিমা হস্তক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভিন্ন ধরনের বিকল্প বিবেচনা ছাড়া কোনো উপায় দেখে না।' তবে এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং রাশিয়া পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বিভিন্ন উপায় বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে পেসকভ।
এদিকে, রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভও পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমন করার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমেরিকা ও তার মিত্রদের বৈরী নীতির কারণে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসে বাধ্য হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। রাশিয়ার দৈনিক 'ইজভেসতিয়া'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, 'পশ্চিমের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে অস্থির পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও আমরা এখনো এমন পদক্ষেপ শুরু করিনি। কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত কি সম্ভব? আমি বলতে পারি, এই সংকটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো সর্বোচ্চ স্তরে নেওয়া হয়। তাই এই বিষয়ে ধারণা করাটা আগাম হয়ে যাবে।' যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে বিশ্ব মঞ্চে পশ্চিমাদের 'দায়মুক্তির ধারণা' শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে আরও সিদ্ধান্তমূলক উপায়ে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
৮১ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম
নিষিদ্ধ করল রাশিয়া
ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত ২৫টি দেশের ৮১টি সংবাদমাধ্যম নিষিদ্ধ করেছে মস্কো, স্যাটেলাইট জ্যাম করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এর অর্থ, রাশিয়ার মানুষ আর এই সংবাদমাধ্যমগুলো দেখতে পারবেন না।
মস্কোর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এসব সংবাদমাধ্যম রাশিয়াবিরোধী খবর প্রচার করছে এবং ভুল তথ্য দিচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে অসত্য তথ্য ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে এই সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতকে 'যুদ্ধ' বলার পক্ষপাতী নয় রাশিয়া। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি এই সংঘাতের শুরু এবং তখন থেকেই মস্কো একে 'বিশেষ সামরিক অভিযান' নামে আখ্যায়িত করে আসছে। কেউ একে যুদ্ধ বললে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে পশ্চিমা অধিকাংশ গণমাধ্যমেই একে যুদ্ধ বলছে।
এর আগেও বেশ কিছু স্বাধীন রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মস্কো। প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মে মাসের একটি ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। ওই মাসে ইইউ চারটি রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। অভিযোগ ছিল, ক্রেমলিনের হয়ে 'প্রোপাগান্ডা' ছড়াচ্ছে ওই গণমাধ্যমগুলো। প্রাগের 'ভয়েস অফ ইউরোপ'ও সেই তালিকায় রয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমটি সরাসরি পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধিতা করে। সে সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছিল মস্কো।
যে গণমাধ্যমগুলো বন্ধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি, জার্মানির স্পিগেল, স্পেনের এল প্যারিস, অস্ট্রিয়া, ইতালি এবং ইতালির জাতীয় সংবাদ সংস্থা আছে। নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম 'পলিটিকো'র ওপরেও।
ইইউ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেরা জৌরোভা মস্কোর এই পদক্ষেপকে 'ননসেন্স' উলেস্নখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' পোস্ট করা এক বার্তায় বলেছেন, 'ক্রেমলিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) ধারাবাহিকভাবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে আসছে। সম্প্রতি যে পদক্ষেপ ক্রেমলিন নিল, তা পুরোপুরি ননসেন্স। মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম প্রপাগান্ডা ছড়ায় না; বরং যেসব গণমাধ্যম প্রপাগান্ডা ছড়ায়, সেগুলোকে অর্থায়ন করে রাশিয়া। এটি তাদের সামরিকতত্ত্বের অংশ।'
মস্কো জানিয়েছে, তারা এই পদক্ষেপ ফিরিয়ে নিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ইইউ যে গণমাধ্যমগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তা তুলে নিতে হবে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'আমরা বারবার সতর্ক করেছিলাম। ইইউ-তে যেসব সংবাদ প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার পক্ষে কথা বলছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের সমস্যায় ফেলা যাবে না, তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। কিন্তু ইইউ তখন সে কথা শোনেনি।'
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর বহু পশ্চিমা গণমাধ্যম তাদের কর্মীদের রাশিয়া থেকে বাইরে নিয়ে যায়। কারণ সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক আইন পাস করে রাশিয়ার পার্লামেন্ট।
গত মঙ্গলবারের নিষেধাজ্ঞা জারির একদিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টার ইভান গারশকোভিচের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে। আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। উলেস্নখ্য, মুক্ত সাংবাদিকতা সংক্রান্ত বৈশ্বিক সূচক প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে রাশিয়ার অবস্থান ১৬২ নম্বরে।