গাজা নিয়ে ইউনিসেফের প্রতিবেদন

ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজারও শিশুর লাশ

ইসরাইলি আগ্রাসনে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিখোঁজ ফিলিস্তিনি বন্দিদের কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন, জাতিসংঘের নিন্দা

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ধ্বংসস্তূপের নিচে আছে বহু শিশুর লাশ
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ শিশুর লাশ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। টানা আট মাসের বেশি সময় ধরে ইসরাইল এই ভূখন্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে। নিরলস ও বর্বর এই আগ্রাসনে গাজায় এরই মধ্যে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু, রয়টার্স ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর টেড চাইবান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, গাজায় 'হাজার হাজার নিখোঁজ শিশুর লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘ প্রধানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের ওপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ সভায় বক্তৃতা করার সময় টেড চাইবান একথা বলেন। চাইবান বলেন, '২০২৩ সালে চার হাজার ৩১২ ফিলিস্তিনি এবং ৭০ জন ইসরাইলি শিশু নিহত হয়েছে বা পঙ্গু হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হত্যা এবং পঙ্গুত্বের সব যাচাইকৃত ঘটনার ৩৭ শতাংশ।' ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আরও বলেন, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা শিশুর সংখ্যা এবং মানবতাবাদী সংস্থা ও ব্যক্তিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় গাজায় নিহত শিশুদের আরও হাজার হাজার ঘটনাকে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি জাতিসংঘ। এদিকে, গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা 'সেভ দ্য চিলড্রেন'। সংস্থাটি গত সোমবার জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলার কারণে গাজা উপত্যকায় ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে, অনেককে আটক করা হয়েছে, অনেককে আবার অচিহ্নিত কবরে সমাহিত করা হয়েছে, আবার অনেকেই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক এই দাতব্য সংস্থা বলেছে, গাজা ভূখন্ডে ইসরাইল নিরলসভাবে স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে তথ্য সংগ্রহ এবং তা যাচাই করা 'প্রায় অসম্ভব'। তবে গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া আনুমানিক চার হাজার শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে এবং বিভিন্ন গণকবরেও অসংখ্য শিশুকে সমাহিত করা হয়েছে। সংস্থাটি আরও জানায়, 'অন্যদের জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে, যার মধ্যে অজ্ঞাত সংখ্যক শিশুকে আটক করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক গাজা থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পরিবারের কাছে তাদের অবস্থান এখনো অজানা।' সেভ দ্য চিলড্রেনস-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর ফর মিডল ইস্ট জেরেমি স্টোনার বলেছেন, 'পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জন কোথায় অবস্থান করছে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। কোনো অভিভাবককে যেন তাদের সন্তানের মৃতদেহ খুঁজে বের করার জন্য ধ্বংসস্তূপ বা গণকবর খুঁড়তে না হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো শিশুর একা ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকা উচিত নয়। কোনো শিশুকে আটকে রাখা বা জিম্মি করাও উচিত নয়। ফিলিস্তিনি বন্দিদের কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন, জাতিসংঘের নিন্দা ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরতা যে চরম সীমা লঙ্ঘন করেছে, তার আরেকটি উদাহরণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ফিলিস্তিনি নিরপরাধ মানুষদের ধরে নিয়ে বন্দি করে তারা কারাগারে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন করছে। ইসরাইলের এই বর্বরতার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার শাখার মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স সাংবাদিকদের কাছে বৃহস্পতিবার এই নৃশংস আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। পশ্চিম তীরে সম্প্রতি এক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে তাকে গাড়ির সামনে বেঁধে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা লরেন্সকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'আমরা আরও গুরুতর অনেক অভিযোগ পাচ্ছি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তারা ফিলিস্তিনিদের ধরে এনে বিনা কারণে বন্দি করছে। এসব বন্দিদের ওপর যৌন নির্যাতন ছাড়াও হিংস্র কুকুর লেলিয়ে দিয়ে নির্যাতন করছে। ভয়ার্ত নারী-শিশুসহ কারাগারে ফিলিস্তিনি আটক বন্দিদের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হিংস্র কুকুর কামড়াচ্ছে। এসব করে তারা বিকৃত মজা পাচ্ছে। ইসরাইলের এসব কর্মকান্ড শুধু মানবাধিকারই লঙ্ঘন হচ্ছে না, বন্দিদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনও চরমভাবে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে গত ২২ জুন এক যুবককে গুলি করে ইসরাইলি সেনারা তাদের জিপ গাড়ির সামনে বেঁধে রেখে মানব বর্ম হিসেবে ব্যবহার করে। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। জাতিসংঘ ওই ঘটনারও কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করে।