ভারতের অষ্টাদশ লোকসভার প্রত্যাশিতভাবেই স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন রাজস্থানের কোটা-বুন্দি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপি প্রার্থী ওম বিড়লা। সপ্তদশ লোকসভায়ও তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যদিও ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বসম্মতভাবে। এবার জিতলেন ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে। বিরোধী প্রার্থী কে সুরেশকে কণ্ঠভোটে হারিয়েছেন তিনি।
পরে নবনির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে রাহুল গান্ধী, অখিলেশ যাদব, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিরোধী দলের সব নেতা তাকে মনে করিয়ে দেন, সংসদে বিরোধী কণ্ঠ রোধ করা হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়। গত লোকসভায় বিরোধী কণ্ঠ স্তব্ধ করা হয়েছিল। একের পর এক বিরোধী সদস্যকে বহিষ্কার করে পাস করানো হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ সব বিল।
বিরোধী নেতারা বলেন, এবার আরও বেশি সংখ্যায় বিরোধীরা জিতে এসেছেন। সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি যেন নতুন লোকসভায় না হয়। বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার যেন রক্ষিত হয়।
প্রথা অনুযায়ী স্পিকার নির্বাচন এবার সর্বসম্মতভাবে হয়নি। ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দেওয়া হবে- সরকার সেই আশ্বাস না দেওয়ায় বিরোধীরা এই নির্বাচনে প্রার্থী খাড়া করেছিলেন। কিন্তু লক্ষণীয়, কণ্ঠভোটের পর বিরোধীরা 'ডিভিশন' দাবি করেননি। অর্থাৎ কোন পক্ষে কতজনের সমর্থন রয়েছে, তা জানতে কাগজে ভোট দেওয়ার দাবি জানাননি। ফলে কণ্ঠভোটেই ওম বিড়লাকে জয়ী ঘোষণা করেন প্রোটেম স্পিকার মহতাব।
এরপরই দেখা যায় সেই দৃশ্য, ভারতীয় রাজনীতির রেষারেষিতে যা ক্রমে বিরল হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীও চলে যান ওম বিড়লার আসনের কাছে। সবাই সদ্য নির্বাচিত স্পিকারকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে করমর্দন করেন এবারের লোকসভায় বিরোধী নেতার দায়িত্ব নেওয়া রাহুল গান্ধী। তারপর প্রথা অনুযায়ী তিনজন বিড়লাকে পৌঁছে দেন স্পিকারের আসনে।
এই রাজনৈতিক শিষ্টাচার গত মঙ্গলবার কিন্তু লোকসভায় দেখা যায়নি। শপথ গ্রহণের পর সংসদীয় রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদিবিরোধী বেঞ্চে গিয়ে তাদের অভিনন্দন জানাননি।
মঙ্গলবার রাতেই কংগ্রেস ঘোষণা করেছিল, রাহুল গান্ধী হবেন বিরোধী নেতা। সেই দায়িত্ব রাহুলের পোশাকেও পরিবর্তন ঘটায়। ভারত জোড়ো যাত্রা শুরুর সময় থেকে এতদিন ধরে যিনি সাদা টি-শার্ট ও ট্রাউজার্স ছাড়া অন্য কোনো পোশাক পরেননি। বিরোধী নেতার দায়িত্ব নিয়ে তিনি সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা পরে লোকসভায় ঢোকেন।
লোকসভায় রাহুল স্পিকারকে অভিনন্দিত করে নিরপেক্ষতা ও ইতিকর্তব্য মনে করিয়ে দেন। রাহুলের পাশাপাশি অন্য বিরোধী নেতারাও সবাই একে একে তাকে বুঝিয়ে দেন, প্রথম ইনিংসে তিনি যেভাবে সভা পরিচালনা করেছিলেন, তা বিরোধীদের হতাশ করেছিল। সভার মর্যাদাহানি হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রতি সুবিচার হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সভার পরিচালক হিসেবে তার সাফল্যের কাহিনী বর্ণনা করেন। কীভাবে কোভিডকালে তিনি সভা চালু রেখেছিলেন, অন্য সময়ের তুলনায় কীভাবে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি বিল পাস করিয়েছেন, সেসব কথা প্রধানমন্ত্রী তাকে মনে করিয়ে দেন।
মোদির সেসব কথার রাশ টেনে রাহুল বলেন, এই সভা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। কত দক্ষতার সঙ্গে সভা পরিচালিত হচ্ছে, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা দেশবাসীকে স্বরক্ষেপণ করতে দেওয়া হচ্ছে কি না। বিরোধী কণ্ঠ রোধ করে সভা চালানো দক্ষতার পরিচয় নয়।
কংগ্রেস নেতা বলেন, 'এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশবাসী বুঝিয়েছে, তারা চায় বিরোধীরা দক্ষতার সঙ্গে সংসদে সংবিধান রক্ষা করুক। এ সভায় যাতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়, আমরা সেটা যেন করতে পারি, সেজন্য আপনার সঙ্গে সহযোগিতায় আমরা প্রস্তুত। শুধু চাই, আমাদের বলতে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আপনি সংবিধান রক্ষা করুন।'