ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজায় ফের স্কুল-শরণার্থী শিবিরে হামলা

ইসরাইলি হামলায় পরিবারের ১০ সদস্য হারালেন হানিয়া খাবার পানির ভয়াবহ সংকট :সাগরের নোনা পানিই এখন শেষ ভরসা

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের মরদেহের অপেক্ষায় গাজার খান ইউনিসের একটি হাসপাতালের সামনে আর্তনাদ করছে এক ফিলিস্তিনি কিশোর। ছবিটি সোমবার তোলা -আল-জাজিরা অনলাইন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে স্কুল ও শরণার্থী শিবিরে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজা শহরের একটি স্কুল ও মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরে চালানো পৃথক হামলায় তারা প্রাণ হারান। হামলায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা শহরের কেন্দ্রস্থলে বাস্তুচু্যত লোকদের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে বোমা হামলা চালায় এবং এতে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হন বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে। গাজা শহরের আল-দারাজ এলাকার আবদেল-ফানাহ হামমুদ স্কুলে চালানো এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এছাড়া মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় আরও অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার মাগাজি শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে ইসরাইলি এই হামলার ফলে অজ্ঞাত সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা গিয়েছিল। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা' পরে জানায়, ওই হামলায় তিন শিশুসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদিকে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় আরও অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬২৬ জনে পৌঁছেছে বলে অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় আরও ৮৬ হাজার ৯৮ জন আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন, কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইসরাইলি হামলায় পরিবারের ১০ সদস্য হারালেন হানিয়া এদিকে, গাজায় হামাসের রাজনৈতিক বু্যরোপ্রধান ইসমাইল হানিয়া ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ১০ সদস্য হারিয়েছেন। মঙ্গলবার তার পারিবারিক বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ইসমাইল হানিয়ার বোনও রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এর আগে গত এপ্রিলে ইসরাইলের বিমান হামলায় ইসমাইল হানিয়ার তিন ছেলে ও তিন নাতি-নাতনি নিহত হয়েছিলেন। গত ১০ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন গাজার আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পে হানিয়ার ছেলেদের বহনকারী গাড়িতে চালানো হামলায় তারা প্রাণ হারান। ঈদ উপলক্ষে হানিয়ার ছেলেরা আল-শাতি ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলে সে সময় জানিয়েছিল ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো। এদিকে, ছেলে ও নাতি-নাতনিদের মৃতু্যর খবরে (শহীদ হওয়ায়) আলস্নাহর কাছে সে সময় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন হামাস প্রধান। তিনি বলেছিলেন, 'তাদের শহীদ হওয়ার মর্যাদা প্রদান করায় আলস্নাহকে ধন্যবাদ।' উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইলি হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সবাই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। খাবার পানির ভয়াবহ সংকট :সাগরের নোনা পানিই এখন শেষ ভরসা দুর্ভিক্ষের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে গাজা। সেখানে চার লাখ ৯৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইসরাইলি বাহিনী ভয়াবহ আগ্রাসনে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাকও সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে একদিকে খাবার নিয়ে ত্রাণবাহী গাড়ি অপেক্ষা করছে, অন্যদিকে তীব্র ক্ষুধায় ছটফট করছে গাজার ছোট ছোট শিশু, নারী, পুরুষ এবং বয়স্ক লোকজন। ত্রাণসামগ্রী নিতে যাওয়া লোকজনের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এমনকি ত্রাণবাহী গাড়ি, বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থাও হামলার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাকে করে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার পরও শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। ইসরাইলের ক্রমাগত হামলায় ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ সহায়তাও পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে। গাজার ছোট ছোট শিশুরা লাইনে দাঁড়িয়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সামান্য পানির ব্যবস্থা হচ্ছে না। পানির এমন তীব্র সংকটের কারণে হাজার হাজার পরিবার এখন সাগরের নোনা পানিই ব্যবহার করতে শুরু করেছে। উত্তর গাজা ইমার্জেন্সি কমিটি জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকার সব কূপ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে সেখানে পানির সংকট আরও তীব্র হয়েছে।