ইসরাইলি আগ্রাসন
যুদ্ধ শেষ করতে রাজি নন নেতানিয়াহু
গাজায় তীব্র লড়াই শেষ হলে আরও সেনা মোতায়েন লেবানন সীমান্তে নেতানিয়াহুকে সতর্ক বার্তা ইসরাইলি দুর্নীতি দমন সংস্থার
প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের পর্যায় শেষ হচ্ছে। তবে এর মানে এই নয় যে, যুদ্ধ শেষ হয়ে আসছে। তিনি বলেন, 'হামাসকে ক্ষমতা থেকে পুরোপুরি না হটানো পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। কোনো ধরনের চুক্তিই আমাকে থামাতে পারবে না।' লেবানন সীমান্তেও ইসরাইলের সেনাবাহিনী শিগগিরই নতুন করে সেনা মোতায়ন করবে বলে জানান তিনি। সেখানে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে গুলি বিনিময় বেড়েই চলেছে। রোববার ইসরাইলের 'চ্যানেল ১৪'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
নেতানিয়াহু জানান, গাজায় তীব্র লড়াই শেষ হয়ে গেলে ইসরাইল লেবাননের উত্তর সীমান্তে আরও বাহিনী মোতায়েন করতে সক্ষম হবে। সেখানে ইরান সমর্থিত হিজবুলস্নাহর সঙ্গে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। তিনি বলেন, 'তীব্র পর্যায় শেষ হওয়ার পর আমাদের বাহিনীর কিছু অংশ উত্তর দিকে সরানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এটি করব, প্রথমত ও সর্বাগ্রে প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে এবং দ্বিতীয়ত, আমাদের সরিয়ে আনা বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য।' নেতানিয়াহু বলেন, শিগগিরই লেবাননের উত্তর সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হবে, কিন্তু সেটা 'প্রতিরক্ষামূলক উদ্দেশ্যে'। চ্যানেল ১৪-কে তিনি বলেন, 'যদি পারি, আমরা কূটনৈতিকভাবে এটি করব। যদি না হয়, আমরা এটি অন্যভাবে করব। তবে আমরা আমাদের বাসিন্দাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।'
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেক দিন ইসরাইলি সামরিক চৌকি ও ভূখন্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ ও তাদের মিত্ররা। ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত এলাকায় এবারের এই সংঘাত ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ যুদ্ধের চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এর ফলে উত্তর ইসরাইল এবং দক্ষিণ লেবাননে হাজার হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচু্যত হয়েছেন।
হামাসের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের পর্যায় কবে শেষ হবে জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, 'খুব শিগগিরই।' তবে গাজায় সামরিক অভিযান চলবে। তিনি বলেন, 'আমি যুদ্ধ শেষ করতে এবং হামাস যেমন আছে, তেমন ছেড়ে দিতে রাজি নই।' ইসরাইলি গণমাধ্যমকে নেতানিয়াহু বলেন, তার লক্ষ্য হচ্ছে- অপহৃতদের ফিরিয়ে আনা এবং গাজায় হামাস সরকারকে উৎখাত করা। তবে ইসরাইলে নেতানিয়াহু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিক্ষোভ-সমাবেশ করে চলেছেন জায়নবাদী ভূখন্ডটি নাগরিকরা। তারা ইসরাইলে আগাম নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে চুক্তির দাবি জানাচ্ছেন।
নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন, তিনি একটি 'আংশিক' চুক্তির জন্য উন্মুক্ত, যা গাজায় এখনো আটক থাকা কিছু বন্দিকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে, এমনকি সবাইকে না হলেও। তবে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হবেন না, যা গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের অবসান ঘটায়। যদিও ইসরাইলি প্রস্তাব এই আক্রমণাত্মক অভিযান শেষ করার পথে এগিয়ে যাবে বলে আগেই দাবি করেছিল আমেরিকা।
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ঘোষণা করেন। বাইডেনের এই প্রস্তাবে তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি হবে। দ্বিতীয় ধাপে 'শত্রম্নতার স্থায়ীভাবে অবসান' এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া গাজার জন্য বহু বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইসরাইল প্রস্তাবটি রচনা করেছে, তবে নেতানিয়াহুসহ বিভিন্ন ইসরাইলি কর্মকর্তা হামাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে এই প্রস্তাবটিকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছেন।
নেতানিয়াহুকে সতর্ক বার্তা ইসরাইলি
দুর্নীতি দমন সংস্থার
এদিকে, সামরিক সাবমেরিন ও ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম নৌযান ক্রয়-সংক্রান্ত দুর্নীতিতে ফেঁসে যেতে পারেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সোমবার দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা নেতানিয়াহুর উদ্দেশে এই সতর্ক বার্তা ইসু্য করেছে।
এসব সাবমেরিন ও নৌযান কেনা হয়েছিল ২০০৯-২০১৬ সালের মধ্যে। সে সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেতানিয়াহু। লিখিত এক বিবৃতিতে সোমবার ইসরাইলের দুর্নীতি দমন সংস্থা জানিয়েছে, এ যাবৎকালের অনুসন্ধান, তদন্ত এ ক্রয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, সাবমেরিন ও নৌযানের ক্রয় নিয়ম অনুযায়ী ঘটেনি এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নিজে এই ক্রয়ের জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। এমনকি এই ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিজের পদ ও ক্ষমতা ব্যবহারও করেছেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি (নেতানিয়াহু) রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন এবং ইসরাইলের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।