রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ায় অস্ত্র পাঠাতে পারে রাশিয়া। ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশোধ হিসেবে মূূলত এই পদক্ষেপ নেবে মস্কো। গত বুধবার উত্তর কোরিয়া সফর শেষে ভিয়েতনাম যান পুতিন। বৃহস্পতিবার সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন। পুতিন এমন সম্ভাবনার কথা বলায় আমেরিকা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উলেস্নখ্য, উত্তর কোরিয়া সফরের সময় কিম জং-উনের সঙ্গে পুতিন একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছেন। এর আগে চলতি বছরের শুরুতেও পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পশ্চিমাদের শত্রম্নদের অস্ত্র দিতে পারে রাশিয়া। কারণ তারা ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং উন্নয়নের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো উত্তর কোরিয়াকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককেও পশ্চিমারা উদ্বেগের সঙ্গে দেখে থাকে।
এর আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন এই মাসের শুরুতে হুমকি দিয়েছিলেন, রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। কারণ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম, এমন অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে সেগুলো দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতিও দিচ্ছে। আর এ নিয়ে নিজের সর্বশেষ মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, উত্তর কোরিয়াও রাশিয়ার অস্ত্র হাতে পেতে পারে। তিনি বলেন, 'আমি বলেছিলাম, আমরা পিয়ংইয়ংসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ করার অধিকার সংরক্ষণ করি। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমাদের চুক্তিগুলোকে বিবেচনায় রেখে আমি এই দেশটিকেও সেই সম্ভাবনা থেকে বাদ দেই না।'
গত বুধবার পুতিন ও কিমের স্বাক্ষরিত চুক্তিটিতে উভয় দেশের যে কোনো একটির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আগ্রাসনের ক্ষেত্রে একে অপরকে তাৎক্ষণিক সামরিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রম্নতির কথা উলেস্নখ করা হয়েছে।
পুতিন বলেন, মস্কো আশা করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দেশটির এই সহযোগিতা পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে, তবে ইউক্রেনের যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ব্যবহার করার দরকার নেই। তিনি বলেন, 'ইউক্রেনের সংঘাতে একে-অপরের সক্ষমতা ব্যবহারের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলতে চাই, আমরা এটির জন্য কাউকে বলছি না, কেউ আমাদের এই প্রস্তাব দেয়নি, তাই এর কোনো প্রয়োজন নেই।'
আমেরিকা ও ইউক্রেন বলেছে, উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে রাশিয়াকে উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে আর্টিলারি শেল এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে। যদিও মস্কো ও পিয়ংইয়ং সেই অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছে। পুতিন আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে 'বড় ভুল' করবে এবং মস্কোও সেই পদক্ষেপের এমন প্রতিক্রিয়া জানাবে যা সিউলের জন্য হবে বেদনাদায়ক। তিনি বলেন, 'আমি আশা করি এমন কিছু ঘটবে না। আর যদি তা ঘটেই, তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী এমন সিদ্ধান্ত নেব, যা দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান নেতৃত্ব সম্ভবত পছন্দ করবে না।'
পুতিনের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা 'ইয়োনহাপ' বলেছে, পুতিন ও কিমের মধ্যে স্বাক্ষরিত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির আলোকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা পর্যালোচনা করবে সিউল।
দক্ষিণ কোরিয়ার কড়া প্রতিক্রিয়া
এদিকে, কিম জং-উনের সঙ্গে ভস্নাদিমির পুতিনের প্রতিরক্ষা চুক্তি করায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি শুক্রবার রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জর্জি জিনোভাইবকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনে ঢুকতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ফার্স্ট ভাইস পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম হং-কিউন পুতিন-কিমের ওই চুক্তি এবং রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহযোগিতা নিয়ে সিউলের দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন জর্জি জিনোভাইবের কাছে।
পুতিনের ঘোষণায় আমেরিকার উদ্বেগ
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের মন্তব্যের পর আমেরিকা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, 'বিষয়টি চরম উদ্বেগজনক। এমন পদক্ষেপ নিলে গোটা কোরীয় উপদ্বীপের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হবে। আর উত্তর কোরিয়া যে ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করবে, তাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাও লঙ্ঘন হতে পারে। যে প্রস্তাবনা রাশিয়া খোদ সমর্থন করেছিল।'