অস্ত্র সরবরাহ সংক্রান্ত একটি মন্তব্যকে ঘিরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে নতুন টানাপড়েনে জড়িয়ে পড়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত ৭৭ বছর ধরে যে মাত্রার কূটনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ দুই দেশ, তাতে এই টানাপড়েনকে বিরল বলছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তথ্যসূত্র : এএফপি
টানাপড়েনের শুরু চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিওচিত্রে নেতানিয়াহুকে বলতে দেখা যায়, আমেরিকার সরকারি প্রশাসন তার দেশের জন্য পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালান আটকে রেখেছে।
বৃহস্পতিবার আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, 'তার এমন কথাবার্তা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক এবং বিরক্তিকর। হামাস ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের অন্যান্য শত্রম্নদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য আমরা যে পরিমাণ সামরিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করেছি এবং এখনো করছি, অন্য কোনো দেশ এমনটা করেনি।'
আগের দিন বুধবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জেন পিয়েরে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, 'হঁ্যা, অস্ত্র-গোলাবারুদের একটি বিশেষ চালানে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই চালানটি ছাড়া অন্য কোনো চালানে তো বাধা দেওয়া হয়নি- আমরা সত্যিই বুঝতে পারছি না, তিনি আসলে কী বলতে চাইছেন।'
গত মে মাসের শুরুর দিকে গাজা উপত্যকার রাফাহতে অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরটিতে লাখ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনি আশ্রয় নেওয়ার কারণে ইসরাইলি বাহিনীর এই অভিযানে ঘোরতর আপত্তি ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। তার সেই আপত্তি উপেক্ষা করেই ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) রাফাহতে অভিযানের নির্দেশ দেন নেতানিয়াহু।
এই নির্দেশ দেওয়ার পর ইসরাইলের জন্য বরাদ্দ একটি মার্কিন সামরিক চালানে স্থগিতাদেশ দেন জো বাইডেন। এটি ছিল দুই হাজার পাউন্ডের বোমার চালান। রাফাহতে অভিযানের সময় ব্যবহারের জন্য এসব বোমা ওয়াশিংটনের কাছে চেয়েছিল ইসরাইল।
তবে সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ঘিরে ক্যাথেরিন জেন পিয়েরে ও জন কারবির সমালোচনায়ও দমে যাননি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার কারবির বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি ব্যক্তিগত আক্রমণ মেনে নিতে রাজি আছি, তারপরও চাই আমেরিকা থেকে গোলাবারুদের চালান অব্যাহত থাকুক। কারণ ইসরাইলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এই গোলাবারুদ জরুরি।'
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল। সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ইসরাইলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র আমেরিকা। গত ৭৭ বছর ধরে ইসরাইলকে নিয়মিত আর্থিক, সামরিক, কূটনৈতিক, গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা অভিযানের শুরু থেকেই ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ দিয়ে আসছে আমেরিকা। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কর্মকর্তারা গত আট মাসে বারবার গাজায় বেসামরিক হত্যা হ্রাসের জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে প্রতিবারই কোনো না কোনো অজুহাতে সেই আহ্বান এড়িয়ে গেছেন নেতানিয়াহু। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদও হয়েছে। সেই বাদানুবাদই এখন রূপ নিয়েছে টানাপড়েনে।