ইসরাইল-হিজবুলস্নাহর মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা

হামলা-পাল্টা হামলা

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইল ও লেবাননের ইরান-সমর্থিত ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ সীমান্তে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের মধ্য দিয়ে সংঘাতের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে চলেছে। এই সংঘাতের কারণে ইসরাইলি বাহিনী বড় আকারের অভিযানের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তথ্যসূত্র : সিএনএন, আল-জাজিরা গত আট মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চললেও সম্প্রতি এটি তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইল এখন তার উত্তর ফ্রন্টকে উপেক্ষা করতে পারছে না এবং সেখানে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে। লেবানন ও ইসরাইল কয়েক দশক ধরে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে রাজধানী বৈরুত পর্যন্ত ট্যাংক পাঠিয়েছিল। লেবাননে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের আক্রমণের পর এটি করেছিল ইসরাইল। পরে ২২ বছর ধরে দক্ষিণ লেবানন ইসরাইল দখল করে রাখে। সেখানে হিজবুলস্নাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ইসরাইলকে ওই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে। হিজবুলস্নাহ ইরান-সমর্থিত একটি লেবানিজ আন্দোলন। গোষ্ঠীটির মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে। তারা ইসরাইলকে প্রতিহত করার দায়িত্বে নিয়োজিত এবং বৈরুত ইসরাইলকে শত্রম্ন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। পশ্চিমা বিশ্বে হিজবুলস্নাহকে প্রায়ই 'সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর সাম্প্রতিক শত্রম্নতা শুরু হয়- যখন ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে অপহরণ করে। এরপর ইসরাইল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে ৩৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হিজবুলস্নাহ বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে তারা ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। গত ৮ অক্টোবর থেকে ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে সংঘাত ক্রমাগত বাড়ছে। সংঘর্ষের সংখ্যা এবং আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়েছে। 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপ'র ইরাক, সিরিয়া ও লেবানন প্রকল্পের পরিচালক হেইকো উইমেন বলেন, এটি একটি ধীরগতির উত্তেজনা, যা ক্রমাগত বাড়ছে। সীমান্তে দুই পক্ষের হতাহতের সংখ্যা এবং হিজবুলস্নাহর ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরণ উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংঘাতের মধ্যে নতুন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। ৮ জুন হিজবুলস্নাহ প্রথমবারের মতো ইরানি তৈরি ফালাক-২ রকেট ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে নিক্ষেপ করে। ফালাক-২ পূর্ববর্তী ফালাক-১ এর উন্নত সংস্করণ। এটির পালস্না বেশি এবং বড় ওয়ারহেড রয়েছে। ইসরাইল উত্তর সীমান্তে তাদের সেনা একটি প্রাচীন অস্ত্র 'ক্যাটাপল্ট' ব্যবহার করেছে। যা ১৬তম শতাব্দী থেকে সামরিক বাহিনী দ্বারা খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। এতে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে লেবাননের ভূখন্ডে ম্যানগ্রোভ বন পোড়ানো হয়েছে। ইসরাইলি সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম 'কান' জানিয়েছে, এটি একটি স্থানীয় উদ্যোগ ছিল এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি। দুই পক্ষই কঠোর বক্তব্য দিয়ে আসছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'যদি কেউ মনে করে, তারা আমাদের ক্ষতি করতে পারে এবং আমরা নীরব থাকব, তারা ভুল করছে। যেভাবেই হোক আমরা উত্তরে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনব।' হিজবুলস্নাহর দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা নাইম কাসেম বলেছেন, 'আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধ চাইছি না। কিন্তু যদি তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, আমরা প্রস্তুত এবং পিছিয়ে যাব না।' বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই পক্ষই হয়ত সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করতে চায় না। তবে তাদের উত্তেজক কর্মকান্ড যে কোনো সময় একটি সংঘাতকে উসকে দিতে পারে। ইসরাইলের গ্যালিলি অঞ্চলে রকেট হামলার কারণে বহু ঘরবাড়ি খালি করা হয়েছে। ইসরাইলি ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইটামার বেন গাভির বলেছেন, 'হিজবুলস্নাহর সব শক্তিশালী ঘাঁটিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে। যুদ্ধ!'