আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে মুসলমান নাগরিকদের প্রতি নতুন নির্দেশনা জারি করেছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নির্দেশনায় রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করেছেন তিনি। পাশাপাশি নিষিদ্ধ ঘোষিত পশু যেন কোরবানি করা না হয় সেই বিষয়েও কড়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ
গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তার রাজ্যের মুসলমান নাগরিকদের প্রতি নির্দেশনাটি জারি করেন। এতে বলা হয়েছে, প্রচলিত রীতি অনুযায়ী শুধুমাত্র নির্ধারিত স্থানে নামাজ পড়তে হবে। ঈদে কোনো কর্মব্যস্ত রাস্তা আটকে নামাজ পড়া যাবে না। এমনকি যেখানে সেখানে কোরবানি করা যাবে না। আগে থেকে ঠিক করে রাখা নির্দিষ্ট জায়গাতেই কোরবানি দেওয়া যাবে এবং কোরবানির পর সেই জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি নিষিদ্ধ কোনো পশুকে কোরবানি দিলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। উলেস্নখ্য, ভারতের ২৮টি রাজ্যের ২০টিতেই গরু জবাই নিষিদ্ধ। এসব রাজ্যের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ অন্যতম।
মুসলমান সম্প্রদায়ের ঈদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দশেরা উৎসব একদিন আগে-পরে হওয়ায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশের প্রতি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে চলা এবং প্রতিহত করারও নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী। আজ (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে দশেরা উৎসব আর এর পরদিনই অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহা।
বিজেপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উত্তরপ্রদেশে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভোটের ফল বড় চমক সৃষ্টি করেছিল। গত দুই লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন জিতলেও এবার এই রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছে সমাজবাদী পার্টি। অখিলেশ যাদবের দল জয়ী হয়েছে ৩৭টি আসনে, বিজেপি পেয়েছে ৩৩টি আসন।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির খারাপ ফলের জন্য অনেকেই যোগীর উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমালোচনা করেছিলেন। অনেকের মতে, রাজ্যে খারাপ ফলের পর নিজের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও পিছু হঠবেন যোগী। তবে কোরবানির ঈদ নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কড়া নির্দেশ সামনে আসতেই পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যোগী রয়েছেন যোগীতেই।
এদিকে, কোরবানির ঈদে ভারতের মুসলমান নাগরিকদের সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে উলামা-ই-হিন্দ সংগঠন। কোরবানির ছবি বা ভিডিও ক্যামেরাবন্দি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড না করার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
মুসলমান সম্প্রদায়ের উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় জামায়াত প্রেসিডেন্ট মাওলানা আরসাদ মারদানি বলেছেন, 'ইসলামে ত্যাগের থেকে বড় আর কিছু নেই। মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের জন্য তা এক ধর্মীয় কর্তব্য। প্রচার এড়িয়ে চলুন। কোরবানি দেওয়ার মুসলমানদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কোরবানির সময় পশু জবাই করার কোনো ছবি বা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে।'
পাশাপাশি সরকারি নির্দেশিকা সঠিকভাবে মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। যদি কোথাও পশু কোরবানি দিতে বাধা দেওয়া হয়, তবে ঝামেলা এড়িয়ে সেখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া বাঞ্ছনীয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি মাদানির আরও পরামর্শ, যদি এই ধর্মীয় রীতি পালনে একান্ত উপায় না থাকে তবে কাছের কোনো জায়গায় গিয়ে রীতি পালনেও অসুবিধা নেই। এছাড়াও এই উৎসবে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। রাস্তাঘাট কিংবা ড্রেনে যথেচ্ছভাবে পশুর বর্জ্য না ফেলে এমনভাবে তা সরিয়ে ফেলতে হবে যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। উৎসবকে ঘিরে যাতে কোনো প্রকার সহিংসতার আবহ তৈরি না হয় সেই বিষয়েও সবাইকে সচেতন করেছেন মাদানি। উৎসবে যাতে শান্তির আবহ বজায় থাকে, কাউকে যাতে আঘাত করা হয় সেই বার্তাও দিয়েছেন তিনি। উৎসবে যদি কোথাও গন্ডগোল হয় তবে আইন নিজের হাতে না তুলে নিয়ে, ধৈর্যচু্যতি না ঘটিয়ে থানার অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো প্রকার ধর্মীয় উসকানিতে পা না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।