রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আবারও বেইজিংয়ের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিশ্ব নেতারা। তারা বলছেন, রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থন ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও 'জোরদার' করছে। ইতালিতে বৃহস্পতিবার শেষ হওয়া জি-৭ সম্মেলনে এই বার্তা এসেছে তাদের কাছ থেকে। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার চীন নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি
বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য লড়াই এড়িয়ে কীভাবে তাদের শিল্পকারখানা রক্ষা করা যায়, সেদিকেই তারা মূলত গুরুত্ব দিচ্ছেন। জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন শেষে আমেরিকা রাশিয়ার সামরিক শিল্প কমপেস্নক্সকে চীনের সহায়তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে সবুজ প্রযুক্তি নিয়ে কীভাবে ন্যায্য ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা আলোচনা করেছেন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জি-৭ নেতারা বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ঘাঁটির প্রতি চীনের সহায়তা রাশিয়াকে অবৈধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম করছে। তারা বলেন, 'আমরা চীনকে অস্ত্রের উপাদান ও সরঞ্জামসহ যুদ্ধের বিভিন্ন উপকরণ হস্তান্তর বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।' রাশিয়াকে সহায়তা করছে, এমন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জি-৭ নেতারা।
আমেরিকা অভিযোগ করে আসছে, চীন মস্কোকে ট্যাংক, যুদ্ধাস্ত্র ও সাঁজোয়া যান উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে। তবে বেইজিং এই অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা কোনো পক্ষকেই অস্ত্র সরবরাহ করেনি। বরং পণ্য রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকা এরই মধ্যে কিছু চীনা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চলতি সপ্তাহে আমেরিকা রাশিয়ায় সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহকারী চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, 'চীন অস্ত্র সরবরাহ করে না, তবে অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা এবং প্রযুক্তি দক্ষতা তাদের আছে। এটি আসলে রাশিয়াকে সহায়তা করছে।'
জি-৭ চীনের অর্থনৈতিক নীতির বিষয়েও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা চীনের ক্রমাগত শিল্প লক্ষ্যমাত্রা এবং ব্যাপক বাজার বহির্ভূত নীতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি। বিশ্বব্যাপী বাজার ব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান খাতগুলোকে ক্ষতিকারক অতিরিক্ত ক্ষমতার দিকে পরিচালিত করছে। এমনকি, আমাদের শ্রমিক, শিল্প এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা এবং সুরক্ষাকে হ্রাস করছে।'
ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে
সুইজারল্যান্ডে বিশ্ব নেতারা
এদিকে, জি-৭ সম্মেলন শেষ করে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। শনিবার (১৫ জুন) সুইজারল্যান্ডের বার্গেনস্টক পাহাড়চূড়ায় শুরু হয়েছে দুই দিনের এই 'ইউক্রেন শান্তি সম্মেলন'। অন্তত ৯০টি দেশের সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
মস্কোর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত শান্তি আলোচনা করতে চাইলে, কিয়েভকে কার্যকরভাবে আত্মসমর্পণের শর্ত দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবির পর, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে প্রথম শীর্ষ শান্তি সম্মেলন শুরু হয়েছে। সুইজারল্যান্ড বলেছে, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো- শেষ পর্যন্ত মস্কোকে জড়িত করে শান্তির পথের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করা, যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন শুক্রবার এই শীর্ষ সম্মেলনটিকে 'সবাইকে বিভ্রান্ত করার কৌশল' বলে উলেস্নখ করেছেন। তবে তিনি শর্ত জুড়ে দিয়ে বলেছেন, মস্কো ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করলেও, কিয়েভ যদি পূর্ব ও দক্ষিণ থেকে তার সেনা প্রত্যাহার সাপেক্ষে অবিলম্বে তার ন্যাটো সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়, তবেই রাশিয়া অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে শান্তি আলোচনা শুরু করবে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবিকে, জার্মানির নাৎসি স্বৈরশাসক হিটলারের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার মতো, আঞ্চলিক 'আল্টিমেটাম' বলে নিন্দা করেন। ন্যাটো ও আমেরিকা তাৎক্ষণিকভাবে পুতিনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।
সম্মেলনে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই ইউক্রেনের মিত্র। আর রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ভারত, তুরস্ক ও হাঙ্গেরি এতে যোগ দিয়েছে। রাশিয়া এই সম্মেলনকে সময়ের অপচয় হিসেবে আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল। এতে অংশ নেওয়ার আগ্রহও রাশিয়ার ছিল না। এরপর চীনও সম্মেলনে শেষপর্যন্ত অনুপস্থিতই থাকছে। ধারণা করা হচ্ছিল, চীনকে দিয়ে রাশিয়ার ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা যাবে। কিন্তু চীন না যাওয়ায়, রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার পশ্চিমা আকাঙ্ক্ষা ম্স্নান হয়ে গেছে।