অবসরের শেষ সপ্তাহে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সিএ রাঘবন ভারতের তৎকালীন বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্করের ফোন পেয়ে বেশ অবাক হয়েছিলেন। পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানানোর জন্য তাকে প্রস্তুত হওয়ার কথা বলেছিলেন জয়শঙ্কর, যিনি এখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঘটনাটি ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বরের। ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎই লাহোরে যান এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক করেন। তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার সিএ রাঘবন তার বই 'দ্য পিপল নেক্সট ডোর'-এ লিখেছেন, নরেন্দ্র মোদি কাবুল থেকে দিলিস্ন ফিরছিলেন। এই লাহোর সফর তার কর্মসূচির অংশ ছিল না। তবুও তিনি লাহোর গিয়েছিলেন 'তার রাজনৈতিক স্বার্থের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য।'
নরেন্দ্র মোদির সেই লাহোর সফরের পর প্রায় এক দশক কেটে গেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বহু বছর ধরেই 'শীতল' অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু এবার নরেন্দ্র মোদি তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর পাকিস্তানি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তাকে শান্তির বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
গত সোমবার প্রথমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তাকে অভিনন্দন জানান, আর তারপর তার ভাই তথা সে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। 'এক্স' হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটারে)-এ পোস্ট করা তার সেই বার্তায় নওয়াজ শরিফ লিখেছেন, 'ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য আমি মোদিজিকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। সাম্প্রতিক নির্বাচনে আপনার দলের ধারাবাহিক বিজয় আপনার নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিফলনকে দর্শায়।'
একই সঙ্গে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকবার নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, আরও একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, 'আসুন আমরা এ অঞ্চলের ঘৃণার পরিবর্তে আশার হাত ধরে এখানে বসবাসকারী ২০০ কোটি মানুষের উন্নয়ন ও কল্যাণের কথা চিন্তা করি।' এর জবাবে মোদি লিখেছেন, 'অভিনন্দন বার্তার জন্য ধন্যবাদ। ভারতের জনগণ সর্বদাই শান্তি, নিরাপত্তা এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার সমর্থক। আমাদের জনগণের কল্যাণ ও সুরক্ষাকে সর্বদাই আমাদের তরফে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'
উলেস্নখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ফের শুরু করার ইঙ্গিত দিয়ে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তান বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি ও সে দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রশ্নে ভারতীয় নেতৃত্ব আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোকে উত্থাপন করে এসেছে।
মোদি-নওয়াজের বন্ধুত্ব ও টানাপড়েন
পাকিস্তানে ২০১৩ সালে ক্ষমতার আসেন নওয়াজ শরিফ এবং ২০১৪ সালে ভারতে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। ক্ষমতায় আসার পর দু'জনের মধ্যে কয়েকটি বৈঠক হয়।
ভারতের সাবেক হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়া তার বই 'অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট'-এ লিখেছেন, '২০১৪ সালে শপথ অনুষ্ঠানের আগেই মোদি পাকিস্তানের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যাতে সার্কের অন্য দেশগুলোর নেতৃত্বের সঙ্গে নওয়াজ শরিফকেও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো যায়।' বিসারিয়া লিখেছেন, 'পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং হাইকমিশনার রাঘবনকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন কি না।' তিনি (সিএ রাঘবন) জানতে চেয়েছিলেন, অতিথি তালিকায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন কি না। তার লেখা বইয়ে বিসারিয়া উলেস্নখ করেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ গ্রহণের আগেই নওয়াজ শরিফ সে বিষয়ে তার সম্মতি জানিয়েছিলেন অনানুষ্ঠানিক এক চ্যানেল মারফত।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরিফের অংশগ্রহণ করার প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি তার চিঠিতে লিখেছিলেন, 'আমার মাকে শাড়ি পাঠানোর জন্য আরও একবার আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' নওয়াজ শরিফকে লেখা তার চিঠিতে নরেন্দ্র মোদি উলেস্নখ করেছিলেন, 'আমি সংঘাত ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে আপনার ও আপনার সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি, যা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নতুন মোড়ের সূচনা করবে।'
অজয় বিসারিয়া জানিয়েছেন, ওই বৈঠকের পর আগামী ১৮ মাসে আরও পাঁচটি বৈঠকের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আরও মজবুত করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী বলছেন, ২০১৪ সালে মোদির শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অংশগ্রহণ করার পর অনুমান করা হয়েছিল যে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হবে, কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন, 'এটি একটি ভালো সুযোগ ছিল...এভাবে চলতে থাকলে আজ পরিস্থিতি আরও ভালো হতো।'
২০১৪ সালের ওই বৈঠকের পর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর মোদি লাহোর সফরে গিয়েছিলেন। অজয় বিসারিয়া জানিয়েছেন, নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তানের একটি সামরিক হেলিকপ্টারে সওয়ার হন মোদি। কিন্তু কয়েকদিন পর পাঠানকোট হামলার ঘটনা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও একবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এজাজ চৌধুরী বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত ২০১৬ সালে মোদি সাহেব পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেন। এরপর ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হলেও সম্পর্কের কোনো উন্নতি চোখে পড়েনি।'
মোদি ও নওয়াজের কথোপকথনের অর্থ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্স'-এ নরেন্দ্র মোদি ও নওয়াজ শরিফের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। জিও নিউজের 'ক্যাপিটাল টক' অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মন্তব্য করেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানানো একটি আনুষ্ঠানিক বার্তা। এটি কূটনৈতিক স্তরে করা হয়।' একই সঙ্গে তিনি সাফ জবাব দিয়ে বলেছেন, 'তো আমরা কোথায় প্রেমপত্র পাঠিয়েছি? শাহবাজ শরিফ যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তিনি (নরেন্দ্র মোদি) আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তাই এখন কূটনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আমরাও একই কাজ করেছি।'
এ বিষয়ে তার মতামত জানিয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি, যিনি পররাষ্ট্রসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করেন। 'এক্স' হ্যান্ডেলে নওয়াজ শরিফের পোস্ট এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর দ্রম্নত প্রতিক্রিয়াকে একটি উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন যে, এটি 'ব্যাক চ্যানেল' মারফত বার্তার কাজ করতে পারে এবং দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কুলকার্নি বলেন, 'নওয়াজ শরিফ আরও একবার মোদির দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। আর শাহবাজ শরিফ এর আগেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কথা বলেছেন।' তার মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হলে ভালো হতো। কিন্তু এখন 'এক্স' হ্যান্ডেলে পোস্টের মাধ্যমে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে কথোপকথনকেও তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে তীক্ষ্ন নজর রাখেন। তিনি মনে করেন, নরেন্দ্র মোদির জবাবে নওয়াজ শরিফের বার্তার মতো হয়তো 'ততটা উষ্ণতা' নেই, তবে মোদি অবশ্যই তার (নওয়াজ শরিফের) মতামতকে সম্মান জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বিশ্লেষণ রয়েছে। যেমন বিশ্লেষক আজিজ ইউনুস জানিয়েছেন, নওয়াজ শরিফের বার্তায় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে তার ক্রমাগত চেষ্টার প্রতিফলন দেখা যায়।
বিশ্লেষক রাজা রুমিও কিন্তু একই মত পোষণ করেন। তিনি নরেন্দ্র মোদি ও নওয়াজ শরিফের মধ্যে কথোপকথনকে 'ইতিবাচক' হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সরদার হামজা জাহিদ নামে এক জনৈক সোস্যাল মিডিয়া ইউজার লিখেছেন, আন্তর্জাতিক নেতাদের বার্তার জবাব দিতে মোদির কয়েক ঘণ্টা সময় লেগেছে, কিন্তু নওয়াজ শরিফের বার্তা পাওয়ার দুই ঘণ্টা পরই তার (নরেন্দ্র মোদির) উত্তর এসেছে।
তবে আয়মাল কমল নামে এক সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী আবার মনে করেন, নরেন্দ্র মোদি তার জবাবে নওয়াজ শরিফকে 'উপহাস' করেছেন। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তার জবাবে (ভারতীয়দের) নিরাপত্তার বিষয়ে কথা বলায় তার প্রশংসা করেছেন অনেক ভারতীয় সোস্যাল মিডিয়া ইউজার।
এতে সম্পর্কের উন্নতি হবে?
আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে 'এক্স' হ্যান্ডেলে এই বার্তা বিনিময়কে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে 'বরফ গলতে' এখনো কিছুটা সময় লাগতে পারে।
সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার বলছেন, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতির আগে দুই দেশে হাইকমিশনার নিয়োগ করা, কৃষিক্ষেত্রে বাণিজ্য এবং আফগানিস্তান ট্রানজিট খোলার মতো প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে, সুধীন্দ্র কুলকার্নির মতে, দুই দেশের জন্যই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে শুধু কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা। তিনি বলেন, প্রয়োজনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ভারত। এ প্রসঙ্গে তিনি নিয়ন্ত্রণ রেখায় 'ক্রস ফায়ারিং' প্রতিরোধের বিষয়েরও উলেস্নখ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, 'মোদি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন নাকি সীমান্ত সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে থাকেন, সেটা দেখার বিষয়। কারণ এবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, পাকিস্তান তাদের দেশে সন্ত্রাসবাদের জন্য ভারতীয় অপারেটিভদের দোষারোপ করছে।' তার মতে, দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হওয়া উচিত। আইজাজ চৌধুরী বলেন, 'আমার মতে, ভারত সরকার যদি পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলে, তবে তা তাদের স্বার্থের পক্ষে হিতকর হবে। তবে সম্ভবত তাদের (ভারতের) নিশ্চয়ই কোনো গ্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি (দুর্দান্ত রণকৌশল) রয়েছে, যে কারণে তারা (পাকিস্তানের সঙ্গে) কথা বলতে চায় না।'
আপাতত সবার চোখ থাকবে জুলাই মাসে কাজাখস্তানে এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) বৈঠকের দিকে, যেখানে নরেন্দ্র মোদি এবং শাহবাজ শরিফ দু'জনেরই অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে অনুমান এবং এক্সিট পোলের বিপরীতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল যে কম আসন পেয়েছে, সে বিষয়ে পাকিস্তানে বেশ আলোচনা হচ্ছে।
ভারতীয় জনতা পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টি আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ঝুলিতে রয়েছে ২৪০টি আসন, যে কারণে সরকার গঠনের জন্য বিজেপির শরিকদের প্রয়োজন ছিল। তাহলে এই 'দুর্বলতা' কি মোদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসতে রাজি করাতে পারবে? এ বিষয়ে সাংবাদিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি জানিয়েছেন, ভারতের নির্বাচনি প্রচারে পাকিস্তানবিরোধী এজেন্ডা কিন্তু কাজ করেনি। আর এদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তিনি বলেন, 'তাই সম্ভবত তিনি (নরেন্দ্র মোদি) আর পাকিস্তান-বিরোধী বক্তব্যে মনোনিবেশ করবেন বলে মনে হয় না।' তিনি বলেন, 'সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলেই তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এটি মোদির তৃতীয় মেয়াদ এবং ইতিহাসে তাকে একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখা হতে পারে, যিনি সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষ চেষ্টা করেননি।'
সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার মোদির নতুন মন্ত্রিসভার কথা বলেছেন, যেখানে বেশকিছু বদল এলেও গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু দপ্তরের রাশ পুরনো ব্যক্তিদের হাতেই রয়েছে। তিনি বলেন, 'তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কথা বলতে চান কি-না, সেটা প্রধানমন্ত্রী মোদির নিজস্ব সিদ্ধান্ত, কারণ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর-সহ তার টিম কিন্তু এখনো আগের মতোই রয়েছে।'
পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) নেতা এবং নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত পারভেজ রশিদ বলেছেন, 'যে কোনো দেশের দুই নেতা, তারা যতই ক্ষমতাশালী এবং মজবুত হন না কেন, পারস্পরিক সম্পর্ককে না খারাপ করতে পারেন, আর না ভালো করতে পারেন। অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে, উভয় পক্ষের শীর্ষ নেতৃত্ব যতক্ষণ না এটা উপলব্ধি করেন যে- তিক্ততা, যুদ্ধ ও শত্রম্নতা দেখিয়ে একে-অপরের সঙ্গে মতবিরোধ করে আমরা কী পেয়েছি? ততক্ষণ এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।'
একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, 'আমাদের ভাবতে হবে কয়েক দশকের মতবিরোধ থেকে আমরা কি জনগণের ভালো কিছু করতে পেরেছি এবং আমাদের কি এখন পৃথক পথ অবলম্বন করা উচিত? আমরা একটি পথ তো বেছে দেখেছি। সেখানে বহু চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু বদলাতে পারিনি।'
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির নিরিখে পারভেজ রশিদ বলেন, 'প্রতিবেশী হিসেবেও এ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে ভারতের কোনো রকম সম্পর্ক নেই। এখন অন্তত আমরা প্রতিবেশী হিসেবে একে-অপরের সঙ্গে বসবাস করতে শিখিনি।' তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ