জি-৭ জোটের সিদ্ধান্ত

রাশিয়ার ৫০ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছে ইউক্রেন

জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে 'সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক' পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি মস্কোর

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইতালিতে জি-৭ ভুক্ত দেশের নেতারা
জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন (পাঁচ হাজার কোটি) ডলার ব্যবহার করতে দিতে সম্মত হয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭। এটি দেওয়া হবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তার জন্য। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এটা রাশিয়াকে আরেকবার মনে করিয়ে দেওয়া যে, 'আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না'। তবে মস্কো এর পাল্টা হিসেবে 'সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক' পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ এই অর্থ চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। কিন্তু এটিকে দেখা হচ্ছে ইউক্রেনকে যুদ্ধ ও দেশটির অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা হিসেবে। ইটালিতে জি-৭ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং জো বাইডেন ১০ বছর মেয়াদি একটি দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তিটিকে কিয়েভ 'ঐতিহাসিক' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেবে। কিন্তু এখানে ওয়াশিংটন সেনা পাঠিয়ে সহায়তা করবে, এমন কোনো প্রতিশ্রম্নতি নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোতে রাশিয়ার প্রায় ৩২৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ফ্রিজ বা জব্দ করা আছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ণ মাত্রার অভিযান শুরুর পর এসব জব্দ করা হয়। এসব সম্পদ থেকে বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার সুদ আসে। জি-৭ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই তিন বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের ৫০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বার্ষিক সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হবে। ইতালির পুগলিয়াতে এবারের জি-৭ সম্মেলন হচ্ছে। সেখানেই এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এই ৫০ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনের জন্য ব্যবহার করা হবে এবং রাশিয়াকে আরেকবার বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, 'আমরা পিছপা হচ্ছি না'। তিনি বলেন, 'পুতিন আমাদের অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারবেন না, তিনি আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে পারবেন না এবং আমরা যুদ্ধে জয় না হওয়া পর্যন্ত ইউক্রেনের পাশে আছি।' প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আমেরিকা ও অন্য সহযোগী দেশগুলোকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নতুন নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, 'এটা সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক দিন এবং আমাদের স্বাধীনতার পর (১৯৯১) এটাই ইউক্রেন ও আমেরিকার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী চুক্তি। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো হলো- কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এসব দেশ ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। চুক্তিটির প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক একে 'গেম চেঞ্জিং' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মে মাসে ইউক্রেনকে ৬১ বিলিয়ন ডলারের যে সামরিক সহায়তার কথা বলেছিল আমেরিকা, তার তুলনায় এই ৫০ বিলিয়ন ডলারকে বড় সহায়তা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে কিয়েভে অনেকে নগদ অর্থ সহায়তার জন্য চেষ্টা করছিল। তারা চেয়েছিল, শুধু সুদ নয়, বরং জি-৭ দেশগুলোতে আটকে থাকা ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই ছাড় দেওয়া হোক। কিন্তু ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি নাকচ করে দিয়েছে। তবে যেহেতু এই অর্থ চলতি বছর শেষ হওয়ার আগে পৌঁছাবে না, সে কারণে চলমান যুদ্ধে এর প্রভাব পড়বে সামান্যই। এখনকার জন্য ইউক্রেন আরও অস্ত্রের দরকার বলে জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা সামলাতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দরকার। একই সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এফ-১৬ যুদ্ধবিমানও চাইছে তারা। ইউক্রেন আশা করছে, এগুলো এবারে গ্রীষ্মেই সেখানে পৌঁছাতে শুরু করবে। জি-৭ বৈঠকে জেলেনস্কি বলেছেন, নতুন নিরাপত্তা চুক্তিতে মার্কিন যুদ্ধবিমানের বিষয়টি রয়েছে। এই ঋণ চুক্তিকে ইউক্রেনের জন্য বড় ধরনের প্রতীকী বিষয় মনে করা হচ্ছে। কারণ দেশটির ওপর আগ্রাসন চালানো দেশকেই অর্থ দিতে বাধ্য করা হবে। আর এটা শুধু দেশটির পুনর্গঠনেই নয়, বরং ইউক্রেনের নিজেকে আত্মরক্ষার জন্যও। জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা বলেছেন, রাশিয়াকে শাস্তি দিতে পশ্চিমাদের এই পদক্ষেপ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে। যদিও এই ঋণের কারণে ইউক্রেন থেকে রাশিয়া সরে আসবে, এমন সম্ভাবনা কম। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশি সম্পদ জব্দ করা আছে বেলজিয়ামে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, দেশগুলো রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে ইউক্রেনকে দিতে পারে না। জি-৭ এর সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা 'সর্বোচ্চ বেদনাদায়ক' পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।